• [english_date] , [bangla_date] , [hijri_date]

জগন্নাথপুরে পাঞ্চায়েতী কবরস্থান রেকর্ডভূক্ত করায় ক্ষুব্দ এলাকাবাসী, ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি

Sonaly Sylhet
প্রকাশিত January 25, 2024
জগন্নাথপুরে পাঞ্চায়েতী কবরস্থান রেকর্ডভূক্ত করায় ক্ষুব্দ এলাকাবাসী, ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি

জগন্নাথপুর প্রতিনিধিঃ- 

মুসলিম জাতীর মৃত্যুর শেষ ঠিকানা হয় কবরস্থানে। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের কান্দারগাঁও-নোয়াগাঁও গ্রামের পাঞ্চায়েতী কবরস্থান দখল করে পারিবারিক কবরস্থানে রূপান্তরিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পরসম্পদ লোভী কান্দারগাও গ্রামের আজিজুর রহমানের পুত্র জয়নাল আবেদীন। কিন্তু এলাকার লোকজন কবরস্থানটি রক্ষায় একজোট হওয়ায় বার বার দখল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিচ্ছেন। দফায় দফায় বৈঠক করে দুটি গ্রামের লোকজন দখল প্রচেষ্টাকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবিও জানিয়েছেন। মামলা দিয়ে লোকজনকে হয়রানীও করছেন বলে অভিযোগ করেছেন এলাকার লোকজন। কাগজপত্র পর্যালোচনা ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, কান্দারগাঁও-নোয়াগাও গ্রামের বাসিন্দাদের ব্যবহৃত শত বছরের পুরানো একটি কবরস্থান রয়েছে। বছর খানেক আগে কবরস্থানের জায়গার মালিকানা দাবি করেন কান্দারগাওয়ের জয়নাল আবেদীন। তিনি তার পিতা আজিজুর রহমানের নামে কবরস্থানের ৬০ শতক ভূমি সেটেলমেন্টে রেকর্ড করিয়ে নেন গোপনে। বিষয়টি এলাকার লোকজন জানতে পেরে প্রতিবাদ করেন ও রেকর্ড সংশোধনের উদ্যোগ নেন। গ্রামের পঞ্চায়েতের নামে রেকর্ড সংশোধনের জন্য দুই গ্রামের ১০১ জন ব্যাক্তি স্বাক্ষরিত আবেদন গত ডিসেম্বরে জগন্নাথপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর দাখিল করেন। সংশোধনের বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, জয়নাল আবেদীন সরকারি জায়গা দখল, জায়গা সংক্রান্ত বিরোধ সৃষ্টি, এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপসহ নানা অনিয়মের সাথে জড়িত। তার কর্মকান্ডে ক্ষুব্দ এলাকার লোকজন। তার কর্মকান্ডের কারণে পঞ্চায়েত কমিটির সাথেও দুরত্ব বাড়তে থাকে। তিনি ৭ জানুয়ারি কান্দারগাঁওয়ের বাসিন্দা এখলাছুর রহমানসহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে জগন্নাথপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি তার জমির ধানের চারা নষ্ট করে ফেলাসহ বসতবাড়িতে গিয়ে মহিলাদেরকে মারধরের অভিযোগ করেন। যদিও অভিযোগটি পুলিশ আমলে নেয়নি। এ বিষয়ে এখলাছুর রহমান তালুকদারের ভাই সাজ্জাদুর রহমান তালুকদার জানিয়েছেন, জয়নাল আবেদীনের দায়ের করা অভিযোগটি মিথ্যা। তারা নিজেরাই ধানের চারা মই দিয়ে নষ্ট করেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে এজেন্ট হিসেবে কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকার পরও এমন ব্যাক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এলাকার লোকজন জানান, কান্দারগাও ও নোয়াগাঁও গ্রামবাসী মিলে ২০২৩ সালের প্রথম দিকে প্রাইমারি স্কুল স্থাপনের জন্য তৎকালীন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বরাবরে আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে মন্ত্রী বিদ্যালয় মন্জুরীসহ সরকারি একটি মুজিব কেল্লা স্থাপনের জন্য আশ্বস্ত করেন। স্কুলের জন্য গ্রামের লোকজন প্রায় ৬ কেদার জমিও দান করেন। কিন্তু জয়নাল আবেদীন দানকৃত ভূমির উপর আদালতে একটি মামলা দায়ের করে বসেন। পরবর্তীতে তার মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
জয়নাল প্রায় ১৫/১৬ বছর যাবত কান্দারগাও জামে মসজিদের ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু পঞ্চায়েতকে কোন বিষয়ে অভিহিত না করে কর্তৃত্ব খাটিয়ে চলেন। বার্ষিক আয় ২ লক্ষ টাকা থাকার পরও মসজিদটির উন্নয়ন হয়নি। মসজিদের কাজের ইট, বালু ও পাথর মসজিদের কাজে না লাগিয়ে তার বাড়ির কাজকর্ম করেছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে রয়েছে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের অভিযোগ। কয়েক বছর আগে কান্দারগাঁও গ্রামের গরীব আলতাব আলীর কাছে ৩০ শতক পতিত জায়গা বিক্রি করেন জয়নাল। পরে আলতাবকে সেই বসতবাড়ি থেকে প্রভাব খাটিয়ে উচ্ছেদ করে দেন। স্থানীয়ভাবে প্রতিকার না পেয়ে সুনামগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা (সিআর-৯৩/২৩) করেন আলতাব।
কান্দারগাঁও গ্রামের হাজী আব্দুন নূর, ছইম উদ্দিন, ইসলাম উদ্দিন, নোয়াগাও গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস, হাজি আব্দুল হাশিম, সফরুল ইসলাম, শেরাটন জানিয়েছেন, জয়নালের কারণে এলাকার লোকজন অতিষ্ট। তার বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।
অভিযোগ বিষয়ে জয়নাল আবেদীনের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি। কবরস্থানের বিষয়ে জগন্নাথপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিয়াদ বিন ইব্রাহিম ভূইয়া জানান, গ্রামবাসীর আবেদনটি তদন্ত করা হয়েছে। কার্যক্রম চলমান রয়েছে।