• [english_date] , [bangla_date] , [hijri_date]

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আতঙ্কের এক নাম সাদেক

Sonaly Sylhet
প্রকাশিত January 12, 2024
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আতঙ্কের এক নাম সাদেক
রমজান আলী ঃ 
প্রসঙ্গে ৬ লক্ষ টাকার ঘুষ বাণিজ্য সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতাল বলতেই সাদেক। স্থানীয় সূত্র ও তদন্তে জানা যায়।কর্মকর্তা কর্মচারী, নার্স আয়া ডাক্তার সবার জন্য হাসপাতালের এক ভয়ানক এক নাম ইসরাইল আলী ওরফে সাদেক। তার কথার বাইরে হাসপাতালের পাখা নড়তনা একসময়। পূরো হাসনপাতালকে জিম্মি করে শত কোটি কোটি টাকা কামাই কামিয়াছেন তিনি। করেছেন গাড়িবাড়িসহ জায়গা  সম্পদের পাহাড়। আর এবার ধরাশায়ী হয়েছেন তিনি। পতন হয়েছে তার সাম্রাজ্যের। সাদেক সাম্রাজ্যের পতনে স্বস্তি ফিরে এসছে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চাকরিচ্যুত হয়ে পলাতক জীবনে চলে গেছেন তিনি।
ক্ষমতাশীন কর্তাব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা সাদেক এসময় নিজেকে ওসমানী হাপাতালের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তি মনে করতেন। হাসপাতালেল পরিচালক, সহকারি পরিচালকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ওঠবস করতেন তারই নির্দেশনা মতে। হাসপাতাল পরিচালকদের বগলের নিচে দাবিয়ে রেখেছিলেন সেই ইসরাইল আলী সাদেক।
পেশায় নার্স হলেও কখনো নার্সের পোষাক পরতেন না তিনি। অফিসারের পোষাক পরেই দাবিয়ে বেড়াতেন হাসপাতালে। কিন্তু ওসমানী হাসপাতালের বর্তমান সাহসী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান  ভূঁইয়া পদায়িত হওয়ার পর থেকে বগলদাবা ক্রমশ সংকোচিত হয়ে আসতে শুরু করে সাদেকের। শেষ মেষ হাসপাতাল ছাড়তে হয়েছে তাকে। যে কারণে নার্সের পোষাক পরে দায়িত্ব পালন করতে হয়েছিল তাকে।
তবে বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দাপট খাটিয়ে চলতে থাকেন বিভিন্নভাবে। হাসপাতালের চিকিৎসাসেবায় তার কথার বাইরে যেতে পারতেন না কোনো নার্স। আর তার ডানে বামে দুই মারানস্ত্রেরমত ছিলেন তাইর অনুগত সিনিয়র নার্স আমিনুল ও সুমন চন্দ্র দেব। যারা এখন শ্রীঘরে।
অভিযোগ রয়েছে, অর্থপ্যাডিক বিভাগের হাড়ের অপারেশনে ব্যবহৃত ইমপ্ল্যান্ট তথা ধাতু দিয়ে তৈরি বিশেষ ধরনের পাত, তার, স্ক্রু, বল ইত্যাদি অবৈধ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে বিক্রি করেই কোটিকোটি টাকা করেন স্টাফনার্স ইসরাইল আলী সাদেক। হাসপালে ছিল তার মালিকাধীন ৪০টির মতো অ্যাম্বুলেন্স। পাশপাশি  হাসপাতাল কম্পাউন্ডে স্থোপন করেন ঔষধের ফার্মেসী।
অ।ভিযোগে আরো প্রকাশ, তার ফার্মেসী থেকে অস্ত্রোপচারের যন্ত্রাংশ না কিনলে রোগির অপারেশনই হতো না। তাঁর পাতানো ফাঁদে অসহায় ছিলেন সাধারণ রোগীরা। শুধু রোগীই নয়, হাসপাতালের  সিনিয়র স্টাফ নার্স থেকে শুরু করে নবাগত নার্সরাও ইসরাইল আলী সাদেকের কাছে ছিলেন জিম্মি।
আরো জানা যায়, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তার গড়ে তোলা সাম্রাজ্যে নিজের মতো করে তৈরী করেন স্টাফ নার্স বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশন (বি.এন.এ) সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শাখা। আর এ সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন স্টাফনার্স ইসরাইল আলী সাদেক। নার্সদের দায়িত্ব ভাগ করে দিয়ে সার্জারি ওয়ার্ডসহ প্রতি ওয়ার্ড থেকে তাদের মাধ্যমে সপ্তাহিক ও মাসোহারা আদায় করে থাকতেন তিনি।
নাম প্রকাল না করার শর্তে ভোক্তভোগী কয়েকজন নার্স অভিযোগ করেন, নার্স হয়েও কর্মকর্তার দাপট খাটিয়ে চলেন সাদেক। এমনটি সুন্দরী নার্সদের দিকে লুলুপ দৃষ্টি থাকে তার এবং আমিনুল ও সুমন চন্দ্র দেবের। তাদের কথায় রাজি না হলে মাসের পর মাস নাইট ডিউটি ধরিয়ে দেওয়া হয়। ইতোপূর্বে অনেক যুবতি নার্স নিয়ে তার কেলেংকারীর খতিয়ান প্রকাশিত হয় গণমাধ্যমের পাতায়। কতিপয় মিডিয়া কর্মীদের ম্যানেজ করেই রেহাই গেয়েছিলেন কেরেংকারীর অভিযোগ থেকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন থেকে একজন ইজারাদার কীভাবে ইজারা নিয়ে হাসপাতার কম্পাউন্ডে এ ফার্মেসি পরিচালনা করে তা সবার কাছেই পরিষ্কার। তাছাড়া ইসরাইল আলী সাদেক মূলত একটা সিন্ডিকেট করে অনিয়মকেই নিয়মে পরিণত করেছেন। ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ।
সম্প্রতি ভয়াবহ আরেক তথ্য উঠে এসেছে এই সাদেকের বিরুদ্ধে। বর্তমান পরিচালককে বশে আনতে না পারায় তার অনুগত নার্সদের দিয়ে চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনিয়ম করিয়ে থাকতেন তিনি। যাতে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় অবহেলার বদনাম হয় পরিচালকের। আর একারণে সাম্প্রতি ওসমানী হাসপাতালে রোগির মৃত্যু বেড়েই চলেছিল।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, বর্তমান পরিচালক মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া দায়িত্ব নেওয়ার  পর তাকে পোষাক পরেই কর্মস্থলে আসতে হয়। বিষয়টি গাত্রদাহ হয় ইসরাইল আলী ছাদেকের। তাই ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার দৈন্যতা দেখাতে চিকিৎসকদের কম অনুপস্থিতির কারণে দায়িত্বে থাকা নার্সরা প্রতিনিয়ত চিকিৎসা সেবায় গাফিলতি করেন। যে কারণে বিগত দিনের চেয়ে বর্তমানে হাসপাতালের রোগির মৃত্যর হার বেড়ে চলেছিল।সোমবার ২৪ ঘন্টায় ওসমানীতে চিকিৎসাধীন ২ হাজার ১৬৯ রোগির মধ্যে চিকিৎসা অবহেলায় ২৮ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে । একইভাগে গত ডিসেম্বর থেকে প্রতিদিন রোগির মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে।  গত ১০ ডিসেম্বর ২৪ জন এবং ১৪ ডিসেম্বর সর্বাধিক ৩১ জন রোগির মৃত্যু হয়।
এর মধ্যে শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে। এক রাতে ৩ ঘন্টার ব্যবধানে ৭ শিশু ও নবজাতকের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার জন্য কর্তব্যরত নার্সদের দায়ি করেছেন অভিভাবকরা।
ভোক্তভোগী সিলেটের ওসমানীনগরের বাসিন্দা সালমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, তামিম নামে তার ভাইয়ে ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার ভাতিজাসহ সেদিন ৩ ঘন্টার ব্যবধানে ৭টি শিশুর মৃত্যু দেখেছেন তিনি। তার রোগির শরীর বেশি খারাপ হওয়াতে নার্সকে ডেকেছেন বেশ কয়েকবার, কিন্তু সাড়া দেননি কেউ। উপরন্তু আনসার দিয়ে তাকে ধমক দেওয়া হয় বিরক্ত না করতে। এক পর্যায়ে দায়িত্বরত নার্স তার শিশু রোগির নাক থেকে নল খুলে আরেক শিশুকে দিতে গেলে নিমিষেই তার ভাইয়ের ছেলের মৃত্যু ঘটে।
তিনি আরও বলেন, নার্সদের ডাকলেও তারা কথা শুনে না। ৫ মিনিটের কথা বলে আধা ঘন্টা দেরি করেন। বেশি বিরক্ত করলে আনসার দিয়ে শরিরীক নির্যাতন করা হয়। রোগির অবস্থা যতই গুরুতর থাকুক ওয়ার্ড থেকে বের করে দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) এক সিনিয়র নার্সের ৩৪ লাখ ১০ হাজার টাকা ওয়্যারবিল উত্তোলন থেকে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন স্টাফনার্স ইসরাইল আলী সাদেক। এই ঘুষের টাকা তার নিতে গিয়ে ধরা পড়েন সাদেকের সহযোগী স্টাফনার্স আমিনুল ও সুমন দেব। এ ঘটনায় মামলাও হয়েছে ইসরাইল আল সাদেকসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে। দুজনকে কারাগারে পাঠনো হলেও পলাতক রয়েছেন ইসরাইল আলী সাদেক। অবশ্য মামলা হওয়াতে ইসরাইল সাদেকসহ  ৩ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করেন হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া। তাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, স্পেসিফিক প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। মূলত; সাক্ষ্য প্রমাণ না পেলেতো কিছুই করা যায় না। আদালতও সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়া বিচার করতে পারেন না।
তবে ভোক্তভোগী নার্সরা সাদেকের বিরুদ্ধে মুখ খুলেন না তিনি মন্ত্রী-এমপিসহ রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সখ্যতার কারণে। তাই রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ের কারণে পলাতক থাকা সাদেক মামলা থেকেও রেহাই পেয়ে যেতে পারেন বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন।।
 অভিযোগ রয়েছে, গত করোনাকালে তার কথা না শোনায় এক ঘন্টার জন্য করোনা ভ্যাকসিন প্রদান বন্ধ করে দেন ইসরাইর আলী সাদেক। পরে সিসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার ধামকিতে তার সুর নরম হয় এবং কর্মে থাকা নার্সদের ফের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে বলেন সাদেক।
এরআগে ২০১৯ সালের ৩ অক্টোবর রাত ৯টা ২০ মিনিটের সময় মোগলাবাজার থানাধীন আলমপুর এলাকা থেকে স্টাফনার্স ইসরাইল আলী সাদেক ও নগরীর উত্তর বালুচর এলাকার ওমর ফারুককে ১০পিস প্যাথেডিনসহ  আটক করে র‍্যাব। ঘটনার সময় তাদের ব্যবহৃত একটি প্রাইভেট কারও জব্দ করা হয়। এরপর ৪ অক্টোবর সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে তাদেরকে মোগলাবাজার থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হলে তাদের বিরুওেদ্ধ  মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ এর ধারা ৩১ (১) ও ৮ (খ) মামলা হয়। মামলাটি করেন র‍্যাব-৯ এর এসআই মো. আব্দুল মালিক ,যা এসএমপির মোগলাবাজার থানার মামলা নং-৪(১০)’১৯)।
পরে মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২য় এর বিচারক মামুনুর রহমান সাদেকের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন। এ ঘটনার পরও অজ্ঞাতকারণে তাকে চাকরী থেকে বরখাস্ত করা হয়নি। উপরন্তু জেল খেটে বেরিয়ে মামলা মাথায় নিয়েও চাকুরী করছিলেন তিনি
এবার দুর্নীীত ও ঘুষগ্রহণের মামলায় আসামী হয়ে পলাতক রয়েছে ওসমানী হাসপাতারে কিং খ্যাত সেই সাদেক।