• [english_date] , [bangla_date] , [hijri_date]

মন্ত্রী কম পেয়ে উত্তরের মুখ ভার, বরিশাল খুলনা সিলেটে হতাশা

Sonaly Sylhet
প্রকাশিত January 12, 2024
মন্ত্রী কম পেয়ে উত্তরের মুখ ভার, বরিশাল খুলনা সিলেটে হতাশা

বগুড়ার রাজনীতি মানেই যুদ্ধ। বিএনপি-অধ্যুষিত এ অঞ্চলে সাত আসনের মধ্যে এবার পাঁচটিতে জিতেছে নৌকা। বাকি দুই আসন শরিকদের দেওয়ায় ছিল না নৌকার প্রার্থী– এমন পরিসংখ্যান তুলে ধরে স্থানীয় ব্যবসায়ী আজমল হোসেন বলেছেন, মানুষ কেন্দ্রে এসে নৌকায় ভোট দিচ্ছে; আওয়ামী লীগ ভালো করছে। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী পদে না থাকলে এলাকার উন্নয়ন হয় না। সবাই ভেবেছিল, এবার জেলার অন্তত একজন মন্ত্রিসভায় থাকবেন। কিন্তু সরকারের বিমাতাসুলভ আচরণে নৌকাপ্রেমীরা হতাশ।

প্রধানমন্ত্রীসহ ৩৭ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভার সবচেয়ে বেশি সদস্য ঢাকা বিভাগের, ১৫ জন। ৯ জন নিয়ে এরপরই চট্টগ্রাম বিভাগ। তারপর সিলেট বিভাগে তিনজন। বাকি বরিশাল, খুলনা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দু’জন করে মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন।

উত্তরাঞ্চলের বেশির ভাগ জেলা এবারও অবহেলিত থেকে গেল। দুই বিভাগীয় শহরসহ বাণিজ্যের শহরখ্যাত বগুড়া থেকে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাননি কেউ। অথচ বিগত সরকারের সময় রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ থেকে চার মন্ত্রী ও তিন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। এবার সাতজন থেকে কমে হয়েছে চার। পুরোনোদের মধ্যে শুধু নওগাঁর সাধন চন্দ্র মজুমদার আছেন। নতুন করে যোগ হয়েছেন দিনাজপুর থেকে আবুল হাসান মাহমুদ আলী। প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে দিনাজপুরের খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও নাটোরের জুনাইদ আহমেদ পলক থাকলেও বাদ পড়েছেন রাজশাহীর শাহরিয়ার আলম। বৃহত্তর রংপুর জেলা, বগুড়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনাসহ ১৩ জেলা হয়েছে বঞ্চিত। এমন অবস্থায় ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীর মাঝে।

২০০৮ সালে রাজশাহী থেকে ওমর ফারুক চৌধুরীকে শিল্প প্রতিমন্ত্রী করা হয়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে রাজশাহী থেকে শাহরিয়ার আলম দুই দফায় প্রতিমন্ত্রী হলেও এবার বাদ পড়েছেন। রাজশাহীর ৬ আসনের মধ্যে ৫টিতে নৌকার প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। বগুড়ার ৭ আসনের মধ্যে ৫টিতে নৌকা জিতলেও মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হয়নি কারও। দিনাজপুর ও নওগাঁ থেকে একজন করে পূর্ণ মন্ত্রী হয়েছেন এবার। যদিও তারা আগেও বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রী ছিলেন। এ ছাড়া নাটোর থেকে একজনকে করা হয়েছে প্রতিমন্ত্রী। গতবার পঞ্চগড় থেকে নূরুল ইসলাম সুজন রেলমন্ত্রী এবং রংপুর থেকে টিপু মুনশি বাণিজ্যমন্ত্রী হলেও এবার দু’জনই বাদ পড়েছেন। বৃহত্তর রংপুর থেকে দু’জন পূর্ণ মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।

বৃহত্তর পাবনা জেলা থেকেও কেউ ডাক পাননি। ২০১৪ সালে পাবনার শামসুল হক টুকু স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। সিরাজগঞ্জ থেকেও কেউ ডাক পাননি। যদিও ২০০৮ সালে জেলাটি থেকে একজনকে পূর্ণ মন্ত্রী করা হয়েছিল।

সুপ্রর জেলা সমন্বয়কারী কে জি এম ফারুক বলেন, উত্তরাঞ্চলে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা অন্যান্য বিভাগের চেয়ে বেশি। রয়েছে নদীবিধৌত চরাঞ্চল। সরকারের উচিত ছিল এ অঞ্চলে বেশি মন্ত্রী করা। উল্টোটা হওয়ায় আমরা ধরেই নিচ্ছি, এবারও উত্তরাঞ্চল পিছিয়ে পড়বে।

রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল বলেছেন, রংপুরের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি আছে। তবে এলাকায় একজন মন্ত্রী দরকার। এতে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

খুলনা বিভাগে প্রতিনিধিত্ব কমে অর্ধেক

খুলনা বিভাগের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করেছিল, গতবারের চেয়ে এবার মন্ত্রিসভায় বেশি প্রতিনিধিত্ব থাকবে। কিন্তু এবার কমে অর্ধেক হয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মন্ত্রিসভায় চারজন করে থাকলেও এবার স্থান পেয়েছে দু’জন। তারা হলেন খুলনা-৫ থেকে নির্বাচিত নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ও মেহেরপুর-১ আসনের এমপি ফরহাদ হোসেন। ২০১৮ সালের মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণ মন্ত্রী হয়েছেন ফরহাদ হোসেন। তবে বাদ পড়েছেন বাগেরহাটের হাবিবুন নাহার, খুলনার বেগম মন্নুজান সুফিয়ান ও যশোরের স্বপন ভট্টাচার্য্য।

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব বাবুল হাওলাদার বলেছেন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে সরকারের নীতিনির্ধারণে সব বিষয়ে খুলনা অঞ্চল বৈষম্যের শিকার। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

আমু-তোফায়েল-মেননের বিভাগে হতাশা

বরিশাল বিভাগে ২০১৪ সালের মন্ত্রিসভায় তিন পূর্ণমন্ত্রী ও একজন মন্ত্রী পদমর্যাদার ছিলেন। তারা দেশের বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও মন্ত্রিপরিষদে প্রভাবশালী ছিলেন। ২০১৮ সালের মন্ত্রিসভার শুরুতে দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব হতাশার হলেও শেষ দিকে সম্প্রসারিত পরিষদে আলোকিত হয়েছিল। তবে এবার বিভাগ একজন পূর্ণ মন্ত্রী না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে এবার দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করছেন বরিশাল-৫ আসনের জাহিদ ফারুক ও পটুয়াখালী-৪ আসনের মুহিবুর রহমান। জাহিদ ফারুক বিগত সরকারের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। মুহিবুর রহমান প্রথম জায়গা পেলেন।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল বাতেন চৌধুরী বলেছেন, একজন মন্ত্রী পেলে দক্ষিণাঞ্চলে প্রধানমন্ত্রীর কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন আরও বেগবান হতো।

আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য বলরাম পোদ্দার বলেছেন, মন্ত্রিসভায় দক্ষিণাঞ্চলের দু’জন প্রতিমন্ত্রী থাকলেও পূর্ণ মন্ত্রী হয়েছেন জাহাঙ্গীর কবির নানক।

প্রভাবশালীরা ছিটকে পড়ায় সিলেটে হতাশা

এবার সিলেট বিভাগ এক প্রতিমন্ত্রী ও দু’জন মন্ত্রী পেয়েছে। একজন টেকনোক্র্যাট হিসেবে আছেন মন্ত্রিসভায়। মৌলভীবাজার-৪ থেকে প্রথমবারের মতো মন্ত্রী হয়েছেন উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ। আর সিলেটের বিশ্বনাথের সন্তান চিকিৎসক সামন্তলাল সেন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হয়েছেন। সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত শফিকুর রহমান চৌধুরী পেয়েছেন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব।

বিপরীতে ঠাঁই হয়নি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের। এ ছাড়া বাদ পড়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফুটে উঠেছে হতাশা। কামরুল ইসলাম তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, নির্বাচনের সময় পুরো সময়টা দিয়েছি নৌকার প্রার্থীর জন্য। ভেবেছিলাম মন্ত্রী হবেন ড. এ কে আব্দুল মোমেন। উন্নয়ন হবে সিলেটের। কিন্তু একেবারেই বাদ দিয়ে দেওয়া হলো তাঁকে।

ময়মনসিংহ বিভাগে কমেছে প্রতিনিধিত্ব

গত দুই মেয়াদের চেয়ে সবচেয়ে কম মন্ত্রী পেয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগ। ময়মনসিংহ-৯ থেকে নবনির্বাচিত এমপি মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানকে পদোন্নতি দিয়ে পূর্ণ মন্ত্রী করা হয়েছে।

স্বাধীনতার পর নান্দাইলে প্রথম পূর্ণ মন্ত্রী পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত এলাকার মানুষ।  তবে ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিন কালাম বলেছেন, বিগত দুই মেয়াদের তুলনায় এবার এ বিভাগ থেকে সবচেয়ে কম মন্ত্রী করা হয়েছে। এতে আমরা খুবই হতাশ।

২০১৯ সালের সংসদে টেকনোক্র্যাট কোটায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হন নেত্রকোনার মোস্তাফা জব্বার। এ ছাড়া নেত্রকোনার আশরাফ আলী খান খসরুকে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী, শরীফ আহমেদকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী, কে এম খালিদ বাবুকে সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবং ডা. মো. মুরাদ হাসানকে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এবং জামালপুরের ফরিদুল হক খানকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছিল।

সুত্রঃ সমকাল