• [english_date] , [bangla_date] , [hijri_date]

অভিযোগ অনুযোগ প্রার্থীদের

Sonaly Sylhet
প্রকাশিত December 28, 2023
অভিযোগ অনুযোগ প্রার্থীদের

সোনালী সিলেট ডেস্ক ঃ

সুনামগঞ্জ জেলার পাঁচটি আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগসহ নানা অভিযোগ উত্থাপন হচ্ছে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে নগদ টাকা বিতরণ, জোর করে অফিস দখলের মত অভিযোগও জানাচ্ছেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে। এছাড়া ভোট চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে রঙ্গিন ব্যানার সাঁটানো, দেওয়ালে পোস্টার লাগানোর ঘটনাও ঘটছে।

 

বুধবার জেলার ধর্মপাশায় দুটি অভিযোগের শুনানী নিয়েছেন নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি। অভিযোগ দুটি’র একটি হচ্ছে, সুনামগঞ্জ—১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের বিরুদ্ধে রনজিত সরকারের সমর্থকের। আরেকটি হচ্ছে রনজিত সরকারের পক্ষের তিনজন দায়িত্বশীল দলের নেতার বিরুদ্ধে মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের সমর্থকের।

সুনামগঞ্জ—১ (ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর ও মধ্যনগর) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাড. রনজিত চন্দ্র সরকারের সমর্থক ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শামীম আহমেদ মুরাদ গেল রবিবার ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের বিরুদ্ধে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগে শামীম আহমেদ মুরাদ উল্লেখ করেন, গেল রবিবার কেটলি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোয়াজ্জেম রতন ধর্মপাশা উপজেলার জনতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি—বেসরকারি শিক্ষকগণের মৌলিক প্রশিক্ষণে প্রবেশ করেন। ওখানে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেটলি প্রতীকে ভোট চান এবং বিভিন্ন আর্থিক সহায়তার আশ^াস দেন। যা নির্বাচন আচরণ বিধির লঙ্ঘন। তদন্তের মাধ্যমে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান তিনি।

অপরদিকে, এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের সমর্থক ধর্মপাশা উপজেলার দক্ষিণ নোয়াগাঁওয়ের মো. আলম লিখিত অভিযোগ করেন অ্যাড. রনজিত সরকারের সমর্থক তিন দলীয় নেতার কিরুদ্ধে। লিখিত অভিযোগে তিনি ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ বিলকিস, যুগ্ম সম্পাদক শামীম আহমদ মুরাদ এবং উপজেলা যুবলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক নূরনবী হাসানের নামোল্লেখ করেন।

তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন রতনকে তিনি নির্বাচনী অফিস করার জন্য ঘর ভাড়া দিয়েছেন। গত ১৮ ডিসেম্বর অভিযুক্ত তিনজন মিলে রতনের অফিসের জন্য ভাড়া দেওয়া ঘরের চাবি জোর করে নিয়ে যান। পরে তিনি ওই ঘরের দরজায় আরও দুটি নতুন তালা লাগিয়ে রাখেন। তিনি ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগে বলেছেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সমর্থকেরা যে কোন সময় তার এই ঘরটি দখলে নিতে পারে। এজন্য তিনি সহযোগিতা চান এবং অবাধ, নিরপেক্ষ ভোটের পরিবেশের নিশ্চয়তাও চান।

এদিকে, আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় ব্যানার, পোস্টার লাগানো হচ্ছে বলেও কোথাও কোথাও অভিযোগ উঠেছে।

সুনামগঞ্জ—২ (দিরাই—শাল্লা) আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (আল—আমিন) এর সমর্থনে বিশালাকৃতির রঙ্গিন ব্যানার সাঁটানো হয়েছে বলে জানান জয়া সেন গুপ্তার একজন সমর্থক।

শাল্লা উপজেলার শাল্লা থানার পূর্ব দিকের দক্ষিণ প্রান্তে ডুমরা গ্রামের রাস্তায় ভাটগাঁও আলোকিত যুব সংঘের সৌজন্যে ও থানার পূর্ব দিকের উত্তর প্রান্তে ভাটগাঁও আলোর দিশারী যুব সংঘের পক্ষ থেকে নৌকার প্রার্থী আল—আমিন চৌধুরীর সমর্থনে রঙ্গিন ব্যানার সাঁটানো হয়েছে। যা পোষ্টার বা ব্যানারের নির্ধারিত আকার থেকে অনেক বড়। উভয় ব্যানারে ৩০ জনের ছবি রয়েছে। এছাড়াও শাল্লা উপজেলা সদরের দুটি গ্রাম ডুমরা ও ঘুঙ্গিয়ারগাঁও এর দেয়ালে দেয়ালে নৌকার পোষ্টার সাঁটানো হয়েছে।

খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে, এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. জয়া সেন গুপ্তার পক্ষেও প্রত্যন্ত এলাকার কোথাও কোথাও রঙ্গিণ ব্যানার টাঙানো হয়েছে।

শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মঞ্জুর আহসান বললেন, শাল্লায় নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অবস্থান করছেন। তাঁরা আচরণবিধি লঙ্ঘন সংক্রান্ত বিষয়টি দেখভাল করছেন। রঙ্গিন ব্যানার লাগানোর বিষয়টি অনুসন্ধান কমিটিকে জানাবেন তিনি।

ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানালেন, দুই প্রার্থীর সমর্থক দুটি লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন। অভিযোগ দুটি নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটিকে পাঠিয়েছেন তিনি। নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি বুধবার অভিযোগের শুনানী গ্রহণ করেছেন।

অনুসন্ধান কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পেশকার সুমন মিয়া জানান, সুনামগঞ্জ—১ আসনের নির্বাচন অনসন্ধান কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক সিনিয়র সহকারী জজ প্রবাল চক্রবর্তী ধর্মপাশা ডাকবাংলোয় বসে বুধবার দুটি অভিযোগের শুনানী গ্রহণ করেছেন।

প্রসঙ্গত. সুনামগঞ্জের পাঁচটি আসনে ২৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সব কয়টি আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হচ্ছে। সুনামগঞ্জ—১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাড. রনজিত সরকারের সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন এই আসনের মনোনয়ন বঞ্চিত বর্তমান এমপি স্বতন্ত্র প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এবং দলের মনোনয়ন বঞ্চিত নেতা সেলিম আহমদ। সুনামগঞ্জ—২ (দিরাই—শাল্লা) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মনোনয়ন বঞ্চিত বর্তমান এমপি ড. জয়া সেন গুপ্তা।

 

সুনামগঞ্জ—৩ (জগন্নাথপুর—শান্তিগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত এমএ মান্নানের সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন সাবেক এমপি তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী। সুনামগঞ্জ—৪ (সদর—বিশ্বম্ভরপুর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত ড. মোহাম্মদ সাদিকের সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন জাতীয় পার্টির বর্তমান এমপি পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ্ ও বিএনএম’র প্রার্থী সাবেক এমপি দেওয়ান শামছুল আবেদীন। সুনামগঞ্জ—৫ (ছাতক— দোয়ারা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মুহিবুর রহমান মানিকের সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন দলের মনোনয়ন বঞ্চিত নেতা শামীম আহমদ চৌধুরী।