• [english_date] , [bangla_date] , [hijri_date]

রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে আপাতত সিদ্ধান্ত নেই সরকারের

Sonaly Sylhet
প্রকাশিত October 24, 2024
রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে আপাতত সিদ্ধান্ত নেই সরকারের

অনলাইন ডেস্ক🖊

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েক উপদেষ্টার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া এবং রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে কয়েকটি সংগঠনের বিক্ষোভ, অবরোধ ও আল্টিমেটামের মধ্যে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দুই উপদেষ্টার সাক্ষাৎ রাষ্ট্রপতি অপসারণ বা পদত্যাগের বিষয়টি জোরালো হয়ে উঠেছিল। যদিও আইন বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, সংসদ ও স্পিকার না থাকায় রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ও নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়োগে সাংবিধানিক জটিলতা রয়েছে। এতে আইনি নৈরাজ্যের (লিগ্যাল এনার্কি) আশঙ্কাও ব্যক্ত করেন কেউ কেউ। আবার রাজনৈতিক ঐকমত্যে রাষ্ট্রপতিকে

অপসারণ সম্ভব বলেও মত দেন কেউ কেউ। এমন অবস্থায় গতকাল বুধবার বিএনপির পক্ষ থেকে ‘এ মুহূর্তে দেশে সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় সংকট কাম্য নয়’ বলার পর পরিস্থিতি ভিন্ন মোড় নিয়েছে।

গতকাল সকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এর পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির নেতাদের মধ্যে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহ উদ্দিন আহমদ। বৈঠকে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমও উপস্থিত ছিলেন।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে দেশত্যাগে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। সেদিন রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি। আড়াই মাসের মাথায় গত ১৯ অক্টোবর দৈনিক মানবজমিনকে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের ‘কোনো দালিলিক প্রমাণ’ তার কাছে নেই। রাষ্ট্রপতির এমন বক্তব্য দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। যদিও মানবজমিনকে রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগ একটি মীমাংসিত বিষয়।

রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে প্রথমে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দাবি করেন, সাহাবুদ্দিন ‘মিথ্যা’ বলে শপথ ভঙ্গ করেছেন। তাকে অপসারণের সম্ভাবনা নিয়েও কথা বলেন উপদেষ্টা। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠন রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে মাঠে নামে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিতকরণ, নতুন সংবিধান গঠন, আওয়ামী দুর্নীতিবাজ আমলাদের পরিবর্তন, হাসিনার আমলে করা সকল অবৈধ চুক্তি বাতিল এবং চুপ্পুকে অনতিবিলম্বে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারণ করতে হবে।

মঙ্গলবার দুপুর থেকে এই দাবিতে একটি পক্ষ বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার পদত্যাগ দাবি করে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে আরেকটি পক্ষ সাতদিন সময় দেয়। এরই মধ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর বঙ্গভবনের সামনের অবস্থানকে ঘিরে হাঙ্গামা তৈরি হয়। ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢুকতে চায় আন্দোলনকারীরা। কিন্তু সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের নিবৃত্ত করে। পরে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ, তারা আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেডও ছুড়ে।

এক পর্যায়ে সেখানে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম। বঙ্গভবনের সামনে দাঁড়িয়ে সেনাবাহিনীর মাইক নিয়ে সারজিস বলেন, তারা এই সপ্তাহের বুধ ও বৃহস্পতি দুই দিন সময় নিচ্ছেন। এর মধ্যে রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ না করলে তারা জনতার নেতৃত্বে আন্দোলনে নামবেন। তারপর বক্তব্য দেন হাসনাত। এ সময় ‘আজকেই পদত্যাগ’ দাবিতে স্লোগান দিচ্ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের নেতা তারেক রহমান ও তার অনুসারীরা। এরপর রাত পৌনে ১২টার দিকে একটি পক্ষ সেই এলাকা ত্যাগ করলেও আরেকটি পক্ষ রাতের মধ্যেই পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে থাকে। গভীর রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ উত্তেজনার পর বঙ্গভবনের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। গতকাল বুধবারও পদত্যাগের দাবিতে বঙ্গভবনের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়েছিলেন তিন ব্যক্তি। তবে আন্দোলনকারীকে জড়ো হতে দেখা যায়নি।

মঙ্গলবার বিক্ষোভ চলার মধ্যেই প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, যা রাষ্ট্রপতির বিদায়ের সম্ভাবনাকে জোরালো করে তুলেছিল। তবে গতকাল এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে আসিফ নজরুল প্রশ্ন এড়িয়ে যান। সাংবাদিক জানতে চান, গতকাল (মঙ্গলবার) আপনি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেছেন…। প্রশ্ন শেষ না করতেই আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘না ভাই, এটা নিয়ে কথা বলবো না। ব্যস্ত আছি….।’ এরপর তিনি গাড়িতে উঠে বেরিয়ে যান।

এরই মধ্যে গতকাল সচিবালয়ে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতি থাকবেন কি থাকবেন না, এ প্রশ্নটি এ মুহূর্তে বাংলাদেশে কোনো আইনি বা সাংবিধানিক প্রশ্ন নয়। এটা একেবারেই একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।’ সরকার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছে জানিয়ে তিনি সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান।

দুই উপদেষ্টার এই অবস্থানের পেছনে ভূমিকা থাকতে পারে গতকাল দিনের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপি প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ। সকালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রায় ১ ঘণ্টা বৈঠক করেন বিএনপির প্রতিনিধি দল। বৈঠক শেষে বিএনপির পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নজরুল ইসলাম খান। এ সময় সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন, বৈঠকে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয়ে আপনাদের কাছে কোনো কিছু জানতে চাওয়া হয়েছিল কিনা বা আপনারা কিছু বলেছেন কিনা। জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট করে নয়, আমরা বলেছি, দেশে নতুন করে সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সংকট যেন সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সবার খেয়াল রাখতে হবে।’

পরে বিএনপির সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে প্রধান উদষ্টোর প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান সংলাপের অংশ ছিল এটি। এ সময় সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে গতকাল বিক্ষোভ-আলটিমেটাম এসেছে, এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান কী? জবাবে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘আমাদের অবস্থান আপনারা দেখেছেন, আমরা বলেছি তারা (বিক্ষোভকারীরা) যেন বঙ্গভবনের পাশ থেকে সরে যান। গতকাল থেকে বঙ্গভবনের আশপাশে নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে।’

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি আছে। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ আছে কিনা, এমন প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা বলছি কোনো অগ্রগতি হলে আপনারা জানবেন।’ তখন সাংবাদিকরা আবারও জানতে চান, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, এই তো? জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ‘হ্যাঁ।’

জানা গেছে, রাষ্ট্রপতি পদে পরিবর্তন নিয়ে আপাতত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না অন্তর্বর্তী সরকার।