• [english_date] , [bangla_date] , [hijri_date]

যে কোনো সময় প্রজ্ঞাপন” হতে পারে জামায়াত নিষিদ্ধ

Sonaly Sylhet
প্রকাশিত August 1, 2024
যে কোনো সময় প্রজ্ঞাপন” হতে পারে জামায়াত নিষিদ্ধ

অনলাইন ডেস্ক 🖊

অঙ্গ সংগঠন ছাত্র শিবিরের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা

অবশেষে স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামী ও তার ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। যে কোনো সময় প্রজ্ঞাপন জারি। অপরাধমূলক কর্মকা-ের জন্য এর আগে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীকে ৩ বার নিষিদ্ধ করা হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশে একবার ও পাকিস্তানে দুই বার।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কয়েকটি রায়ের পর্যবেক্ষণে জামায়াতে ইসলামীকে ‘ক্রিমিনাল দল’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে উদ্যোগী হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭২ সালের সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয় জামায়াতে ইসলামী।

তবে ১৯৭৬ সালের ৩ মে তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের ইচ্ছায় রাষ্ট্রপতি এএসএম সায়েম একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধানের ৩৮ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। ফলে স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী রাজনীতি করার সুযোগ পায়।
বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ও সুশীল সমাজের দাবি ছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সন্ত্রাস দমন আইনের-১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। এখনো প্রক্রিয়াধীন। যে কোনো মুহূর্তে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। প্রজ্ঞাপন জারি হবে যে কোনো মুহূর্তে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জামায়াত-শিবির চলমান পরিস্থিতি তৈরি করেছে। শিক্ষার্থীদের সামনে রেখে তারা ধ্বংসাত্মক কাজ করেছে। তাদের বিচারের মুখোমুখি করতেই রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।’
এর আগে নির্বাচন কমিশন এই দলটির নিবন্ধন বাতিল করে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন কর্তৃত্ববহির্ভূত ও অবৈধ বলে হাইকোর্টের রায়ের পর নিবন্ধন বাতিলের গেজেট প্রকাশ করে কমিশন। তার আগে নিবন্ধনের তালিকা থেকে নাম কর্তন, প্রতীকের তালিকা থেকে জামায়াতের ‘দাঁড়িপাল্লা’ বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নেয় ইসি।
গত ২৯ জুলাই গণভবনে ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পরদিন মঙ্গলবার দুপুরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, বুধবারের মধ্যে নির্বাহী আদেশে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হবে। ওইদিন তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গেও এ বিষয়ে বৈঠক করেন। এ ঘটনায় সারাদেশে নিরাপত্তা বাবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
দলটিকে নিষিদ্ধ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হচ্ছে যে কোনো সময়। রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার প্রক্রিযার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক অনুবিভাগ উপযুক্ত কারণসহ ফাইল মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। এরপর আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে ফাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দুই মন্ত্রী ফাইল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যান। প্রধানমন্ত্রী জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি অনুমোদন করেন।

একাত্তরের ঘাতক নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির জনকণ্ঠকে বলেন, জামায়াতের রাজনীতি যতক্ষণ থাকবে, ততক্ষণ হত্যা-সন্ত্রাসের রাজনীতি বন্ধ হবে না। এই কারণেই বঙ্গবন্ধু ও তার সরকার ১৯৭২ সালে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন। ‘কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে, সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিলেন।
সংবিধান থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চেতনা সব মুছে ফেললেন এবং জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক দল হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করলেন।
২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ। ওই সময় রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল (লিভ টু আপিল) খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আপীল বিভাগের আদেশের পর রিটকারী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর ওই সময় বলেছিলেন, ‘নিবন্ধন বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতের আপিল খারিজ হয়ে যাওয়ায় দলটির আর কোনো অস্তিত্ব থাকল না। তাই জামায়াত আজ থেকে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করতে পারবে না। কোনো মিছিল-মিটিং করতে পারবে না।’
নির্বাচন কমিশনের প্রজ্ঞাপন ॥ এর আগে ২০১৩ সালে এক রিটের পর জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। ওই রায়ের পাঁচ বছর পর ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর আওতায় রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর দলটিকে নিবন্ধন দেওয়া হয়।

অবশেষে স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামী ও তার ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। যে কোনো সময় প্রজ্ঞাপন জারি। অপরাধমূলক কর্মকা-ের জন্য এর আগে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীকে ৩ বার নিষিদ্ধ করা হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশে একবার ও পাকিস্তানে দুই বার।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কয়েকটি রায়ের পর্যবেক্ষণে জামায়াতে ইসলামীকে ‘ক্রিমিনাল দল’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে উদ্যোগী হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭২ সালের সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয় জামায়াতে ইসলামী।

তবে ১৯৭৬ সালের ৩ মে তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের ইচ্ছায় রাষ্ট্রপতি এএসএম সায়েম একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধানের ৩৮ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। ফলে স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী রাজনীতি করার সুযোগ পায়।
বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ও সুশীল সমাজের দাবি ছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সন্ত্রাস দমন আইনের-১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। এখনো প্রক্রিয়াধীন। যে কোনো মুহূর্তে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। প্রজ্ঞাপন জারি হবে যে কোনো মুহূর্তে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জামায়াত-শিবির চলমান পরিস্থিতি তৈরি করেছে। শিক্ষার্থীদের সামনে রেখে তারা ধ্বংসাত্মক কাজ করেছে। তাদের বিচারের মুখোমুখি করতেই রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।’
এর আগে নির্বাচন কমিশন এই দলটির নিবন্ধন বাতিল করে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন কর্তৃত্ববহির্ভূত ও অবৈধ বলে হাইকোর্টের রায়ের পর নিবন্ধন বাতিলের গেজেট প্রকাশ করে কমিশন। তার আগে নিবন্ধনের তালিকা থেকে নাম কর্তন, প্রতীকের তালিকা থেকে জামায়াতের ‘দাঁড়িপাল্লা’ বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নেয় ইসি।
গত ২৯ জুলাই গণভবনে ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পরদিন মঙ্গলবার দুপুরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, বুধবারের মধ্যে নির্বাহী আদেশে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হবে। ওইদিন তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গেও এ বিষয়ে বৈঠক করেন। এ ঘটনায় সারাদেশে নিরাপত্তা বাবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
দলটিকে নিষিদ্ধ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হচ্ছে যে কোনো সময়। রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার প্রক্রিযার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক অনুবিভাগ উপযুক্ত কারণসহ ফাইল মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। এরপর আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে ফাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দুই মন্ত্রী ফাইল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যান। প্রধানমন্ত্রী জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি অনুমোদন করেন।

একাত্তরের ঘাতক নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির জনকণ্ঠকে বলেন, জামায়াতের রাজনীতি যতক্ষণ থাকবে, ততক্ষণ হত্যা-সন্ত্রাসের রাজনীতি বন্ধ হবে না। এই কারণেই বঙ্গবন্ধু ও তার সরকার ১৯৭২ সালে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন। ‘কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে, সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিলেন।
সংবিধান থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চেতনা সব মুছে ফেললেন এবং জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক দল হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করলেন।
২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ। ওই সময় রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল (লিভ টু আপিল) খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আপীল বিভাগের আদেশের পর রিটকারী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর ওই সময় বলেছিলেন, ‘নিবন্ধন বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতের আপিল খারিজ হয়ে যাওয়ায় দলটির আর কোনো অস্তিত্ব থাকল না। তাই জামায়াত আজ থেকে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করতে পারবে না। কোনো মিছিল-মিটিং করতে পারবে না।’
নির্বাচন কমিশনের প্রজ্ঞাপন ॥ এর আগে ২০১৩ সালে এক রিটের পর জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। ওই রায়ের পাঁচ বছর পর ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর আওতায় রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর দলটিকে নিবন্ধন দেওয়া হয়।

তাদের নিবন্ধন নম্বর ছিল ১৪। ২০০৯ সালে হাইকোর্টে দায়ের করা ৬৩০ নম্বর রিট পিটিশনের রায়ে আদালত জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০-এইচ ধারা অনুযায়ী ২০১৮ সালে অক্টোবরে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করা হয়।
তরিকত ফেডারেশনের রিট ॥ ২০০৮ সালে ৩৮টি দলের সঙ্গে আগের সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী জামায়াতও নিবন্ধন পায়। আইন অনুযায়ী, শুধু নিবন্ধিত দলগুলোই বিগত নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। জামায়াতকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে তরিকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে একটি রিট আবেদন করে। এ রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে রুলটি যথাযথ (অ্যাবসিলিউট) ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করা হয়।
হাইকোর্টের রায় ॥ ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্টের বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজাউল হকের সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর ও বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। একই সঙ্গে আদালত ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সনদ দেন। হাইকোর্টের রায়ের পর ২০১৩ সালের ২ নভেম্বর তিন বিচারপতির স্বাক্ষরের পর পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হয়।

সালের ১ আগস্ট উন্মুক্ত আদালতে তিন বিচারকের বেঞ্চ সংবিধানের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে দেওয়া ওই রায়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের পক্ষে মত দেন। ভিন্নমতে জানান বেঞ্চের প্রিসাইডিং বিচারক বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন। সংক্ষিপ্ত রায়ে বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন বলেন, ‘বাই মেজরিটি, রুল ইজ মেইড অ্যাবসলিউট অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন গিভেন টু জামায়াত বাই ইলেকশন কমিশন ইজ ডিক্লেয়ার্ড ইলিগ্যাল অ্যান্ড ভয়েড।’

পূর্ণাঙ্গ রায়ের মূল অংশটি লেখেন বিচারপতি কাজী রেজাউল হক। তিনি লেখেন, ‘জামায়াত এবং নির্বাচন কমিশন যুক্তি দেখিয়েছে, নিবন্ধনটি সাময়িক ছিল। কিন্তু সাময়িক নিবন্ধন দেওয়া যায় বলে আমরা কোনো বিধান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে পাইনি। নিবন্ধন সনদেও সাময়িক নিবন্ধন বলে কোনো বিষয় আমরা পাইনি।’
১৫৮ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে পাঁচ বছর আগে জামায়াতে ইসলামীকে কর্তৃত্ব বহির্ভূতভাবে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন দিয়েছিল বলে বলা হয়েছে।

রায়ে বলা হয়, এই দলের প্রতীক দাঁড়িপাল্লা নিয়ে আর কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন বলেন, যেহেতু এই বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি দরখাস্ত রয়েছে। এখান থেকেই নিষ্পত্তি হওয়া দরকার। আদালতের আমলে নেওয়ার দরকার নেই। বিচারপতি কাজী রেজাউল হক বলেন, সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিধান নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। যেতেতু এটা সাংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়েছে, সংবিধান সংশোধন করেনি। সেজন্য নিবন্ধন বাতিল বলে ঘোষণা করা হলো।
নির্বাচন কমিশনে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিল ॥ হাইকোর্টের রায়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম উল্লেখ করেন, প্রতারণা, প্রবঞ্চনা-এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘যদি কেহ জ্ঞাতসারে অথবা হটকারিতাপূর্বক কোনো ঘটনা সম্পর্কে এমন উদ্দেশ্যে মিথ্যা কথা বলেন যে, অপর ব্যক্তি তাহার ওপর নির্ভর করে কাজ করেন। প্রতারণা বা প্রতারকের কৌশল একটি সূক্ষ্ম ধূর্ত ফন্দি বা পরিকল্পনা যাহার কোনো নাম নেই। সকল ধরনের শঠতা, সূক্ষ্মতা, চাতুর্য, প্রবঞ্চনা, ধুর্ততা, অবজ্ঞা, দক্ষতা, গোপন চুক্তি, আচরণ ও আক্রমণ এবং অন্যকে প্রতারিত করার যে কোনো উপায়, যার ‘অপরাধ’ ব্যতীত কোনো যথার্থ বা সুনির্দিষ্ট নাম নাই।’

আইনের সুপ্রতিষ্ঠিত নীতি হলো যে, শঠতাপূর্ণ যে কোনো কার্যক্রমই অশুদ্ধ ও অকার্যকর। উপরোক্ত বিবেচনা করলে এ অভিমত ব্যক্ত করা যায় যে, জামায়াতে ইসলামী তর্কিত নিবন্ধনটি হাসিলের জন্য নির্বাচন কমিশনে প্রবঞ্চনা বা প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিল। অতএব ওই নিবন্ধনটি অশুদ্ধ ও অকার্যকর। রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়, নবম জাতীয় সংসদে প্রথম বৈঠকের বারো মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন সংক্রান্ত সব কার্যক্রমেই বে-আইনি ও ক্ষমতা বহির্ভূত এবং সকল কার্যক্রম অশুদ্ধ হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের মতো একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের বে-আইনি ও ক্ষমতা বহির্ভূত কার্যক্রমকে অনুমোদন দেওয়া যায় না। রায়ে আরও বলা হয়, ত্রয়োদশ সংশোধনী সংক্রান্ত মামলায় প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক মতামত ব্যক্ত করেছেন যে, ‘জাতীয় সংসদ যে কোনো সংশোধনী করিতে পারিলেও সংশোধনীর শর্ত ভঙ্গের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো সংশোধন আইন জাতীয় সংসদ করতে পারে না। (৬৪ ডি এল আর (এডি) পৃষ্ঠা ৩০৪, অনুচ্ছেদ ৪৯১)।

রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, বিখ্যাত সাংবাদিক রবার্ট পেইন তার সাড়া জাগানো ‘ম্যাসার্কার’ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, ‘বুদ্ধিজীবী হত্যার দীর্ঘ তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছিল আলবদর নামে ধর্মোন্মত্ত দলকে নিয়ে। এরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদের গোপনে হত্যার চক্রান্ত করে। শুধুমাত্র গোপন চক্রান্ত নয়, আলবদর এ সকল হত্যাকা- ঘটিয়েছে লোকচক্ষুর অন্তরালে।’
সহযোগী সংগঠন ॥ তদন্ত সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, আইন অনুযায়ী মানবতাবিরোধী অপরাধে ব্যক্তির পর সংগঠনের বিচার তদন্ত এই প্রথম হয়েছে। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের মূলত চারটি বিষয় নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে জামায়াতের রাজনৈতিক কৌশল, ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যা।এ ছাড়া প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি সংগঠনকে সামনে রেখে জাামায়াতের অপরাধ তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জামায়াতের হাইকমান্ড (গোলাম আযম, মজলিশে শূরা), ছাত্র শাখা (ইসলামী ছাত্র সংঘ), জামায়াতের লিয়াজোঁ কমিটি (শান্তি কমিটি) অপারেশন কমিটি (রাজাকার, আলবদর, আলশামস) , প্রপাগান্ডা ( দৈনিক সংগ্রাম)।