✒অনলাইন ডেস্ক
গৌরবময় পথচলার ৭৫ বছরে আওয়ামী লীগ। ইতিহাস ঐতিহ্য সংগ্রাম অর্জনের পথচলায় দলটি এবার ৭৫ বছর পূর্ণ করে পা দিলো ৭৬ বছরে। পাকিস্তান নামক ঔপনিবেশিক ধরনের কৃত্রিম রাষ্ট্রের নিগড়ে বাধা বাঙালি একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভাষা-সংগ্রাম, স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকারের জন্য ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ভেতর দিয়ে এই ভূ-খণ্ডে পাকিস্তানের কবর রচনা করে। এর মধ্য দিয়ে বাঙালি তাদের জাতি-রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে।
৭৫ বছরের অভিযাত্রার মধ্যে ৪৩ বছর ধরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। আর নেপথ্যে থেকে বড় বোন শেখ হাসিনাকে শক্তি জুগিয়েছেন ছোট বোন শেখ রেহানা। শেখ হাসিনা তার ৭৭ বছর অতিক্রান্তে টানা চার মেয়াদসহ পঞ্চমবার সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ৪৩ বছরের দায়িত্বভারে তারই ছোট বোন শেখ রেহানা নেপথ্যে-প্রকাশ্যে ছায়াসঙ্গী হয়ে পাশে আছেন।
ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাফল্য সংগ্রাম ও অর্জনের পথ পেরিয়ে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার পথচলার আরেক নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ৪৩ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নৌকার হাল ধরে এগিয়ে যাচ্ছেন। পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ পরিচালনা করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। চলতি বছরে টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে দেশ পরিচালনায় নিয়োজিত আছেন। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনেও নৌকার বিজয়ের প্রত্যয়ে ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ’ স্লোগানে ২২তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনেও দলের সভাপতি হিসাবে স্বপদে বহাল থাকেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের মধ্য দিয়ে টানা ১১তম বার সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার গুরুভার পান বঙ্গবন্ধু শেখ হাসিনা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের প্রথম সন্তান শেখ হাসিনার জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায়। ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি হওয়া শেখ হাসিনা পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকাণ্ডের পর সমুদ্রসংকুল পথ পাড়ি দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির হাল ধরে দলকে চারবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেছেন। বর্তমানে টানা তৃতীয় মেয়াদ রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্বে আছে তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ।
স্বাধীন দেশে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট পরিবারের সবাইকে হারিয়ে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়েছে শেখ হাসিনাকে। দেশে ফেরার পরও ষড়যন্ত্র আর মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েই বিপদসঙ্কুল পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। এই দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম সাফল্যগাথার পথ পাড়ি দিতে ১৫ আগস্টে এতিম হওয়া বঙ্গবন্ধু কন্যাকে কখনো শত্রুপক্ষ, কখনো দলের ভিতর বর্ণচোরা বন্ধুবেশী শত্রুদের দ্বারা বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন।
বর্তমানে ২০০৯ সাল থেকে টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থেকে বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশের কাতারে নেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ ধরে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় করেছেন। পদ্মা সেতু থেকে দেশের দৃশ্যমান উন্নতি আজ প্রশংসা কুড়াচ্ছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। সরকার প্রধান হিসেবেও রাষ্ট্রীয় গণ্ডি পেরিয়ে বৈশ্বিক মণ্ডলে বিভিন্ন খেতাব, পুরস্কারসহ মানবিক উপাধিতেও ভূষিত হয়েছেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘরে জন্ম নেওয়া শেখ হাসিনার বেড়ে ওঠা পুরোপুরি রাজনৈতিক আবহে। ষাটের দশকে ইডেন কলেজে ছাত্রলীগের কর্মী হিসাবে তার রাজনীতির ময়দানে পথচলা শুরু। ১৯৬৬-৬৭ সালে ইডেন কলেজের ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন তিনি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছাত্রলীগের রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার আগেই শেখ হাসিনার বিয়ে হয় পরমাণু বিজ্ঞানী এম ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে। তাদের দুই সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা হোসেন পুতুল। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সেনাবাহিনীর একদল সদস্য যখন সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করে, তখন স্বামীর কর্মসূত্রে ইউরোপে ছিলেন শেখ হাসিনা। সে সময় তার সঙ্গে থাকা ছোট বোন শেখ রেহানাও প্রাণে বেঁচে যান। ওয়াজেদ মিয়া তখন থাকতেন জার্মানিতে, ১৫ আগস্ট তারা বেলজিয়ামে গিয়েছিলেন বেড়াতে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ সময় দেশে ফিরতে পারেননি।
১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার অনুপস্থিতিতেই আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তাকে দলীয় সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তারপর থেকে এখনও সেই পদেই বহাল আছেন তিনি। তাই বারবার দেশবাসীসহ দলের নেতাকর্মীদের স্মরণ করিয়ে করিয়ে দেন, আমি বাবা মা ভাই সব হারিয়েছি, আপনারাই আমার আপনজন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে দলের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আজ অবধি সভাপতির দায়িত্বে আছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
দীর্ঘ সংগ্রাম পথচলার বাঁকে বাঁকে জীবন ঝুঁকির মুখে পড়লেও দলের নেতাকর্মী ও জনতার সাহসে লড়ে গেছেন শেখ হাসিনা। দেশে ফিরে দলকে ঐক্যবদ্ধ করে সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোল সংগ্রাম গড়ে তুলতে ভূমিকা পালন করেন। এ ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালে প্রথম দেশের প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা।
২১ বছর পর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগ। এরপর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে ২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। সে থেকে এখন টানা চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন বঙ্গবন্ধুর বড় কন্যা শেখ হাসিনা। তার দলের কোন পদ পদবী বা সরকারি কোন দায়িত্বে না থেকেও নেপথ্যে থেকে বড় বোনকে সাহস জুগিয়ে পাশে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা। অথছ এই স্বাধীন দেশে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট পরিবারের সবাইকে হারিয়ে বিদেশের মাটিতে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয় দুই বোনকে। নির্মম নিষ্ঠুরতায় ১৫ আগস্টের রাতে পিতা-মাতা ভাই স্বজন হারিয়ে নিঃস্ব দুই বোনের মধ্যে ছোট বোন শেখ রেহানা দলীয় পদ ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বলয়ের বাইরে থেকে ছায়াসঙ্গী হিসাবে নেপথ্যে সাহস জুগিয়ে যাচ্ছেন বড়বোনকে। যে কারণে তিনি আজ দলটির আপামর নেতাকর্মীদের কাছে ছোট আপা হিসাবে পরিচিত পেয়েছেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সেনাবাহিনীর বিপথগামী একদল সদস্য যখন সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করে, তখন স্বামীর কর্মসূত্রে ইউরোপে ছিলেন শেখ হাসিনা। সেসময় তার সঙ্গে থাকা ছোট বোন শেখ রেহানাও প্রাণে বেঁচে যান। ওয়াজেদ মিয়া তখন থাকতেন জার্মানিতে, ১৫ অগাস্ট তারা বেলজিয়ামে বেড়াতে গিয়েছিলেন।
দলীয় নেতাদের মতে, শেখ রেহানা বড় বোন শেখ হাসিনাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যাচ্ছেন। ওয়ান-ইলেভেনের সময় তিনি অনন্য ভূমিকা রাখেন। সেসময় শেখ হাসিনার মুক্তির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে এবং আন্তর্জাতিক মহলে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে শেখ রেহানা মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। শেখ হাসিনার কারাবাসের সময় শেখ রেহানা দলীয় নেতাদের শুধু সাহসই জোগাতেন না, সেসময় তিনি আন্দোলনের কর্মসূচি সম্পর্কেও দিকনির্দেশনা দিতেন।
এখনও সক্রিয় রাজনীতির সামনের সারিতে আসেননি শেখ রেহানা। তবে আওয়ামী লীগের প্রতিটি সংকটে বড় বোন শেখ হাসিনার পাশে থেকে সহযোগিতা করে গেছেন। দেশ ও জাতির কল্যাণে অনেকটা নেপথ্যে থেকেই ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা। রাজনীতি ও ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও শেখ রেহানা সবসময় পেছনেই থেকেছেন বড় বোন শেখ হাসিনার ছায়াশক্তি হিসেবে।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রেহানা শেখ হাসিনার সঙ্গে সেই সমাবেশে যোগ দিতে চেয়েছিলেন শেখ রেহানাও। তবে বড় বোন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা হাসিনা তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। নৃশংস হামলার ঘটনার পর বড় বোন ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলে সেদিনও ছায়াসঙ্গীর মতো পাশে ছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনী প্রচারণার শুরুর দিন টু্ঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমে দুইবোন একসঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। জাতীয় বিশেষ উদযাপন বা অর্জনের বিশেষ মূহুর্তগুলোতে ছোট বোনও তাই বড় বোনের পাশে দেখতে থাকা যায়। আবার কখনো দুই বোন একসঙ্গে ছুটে যান টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে। আবার কখনো একসাথে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বা বনানী কবরস্থানে যান মা-ভাইসহ নিহত স্বজনদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।
আওয়ামী লীগ নেতারাও কৃতজ্ঞতায় স্বীকার করেন, শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা হওয়ার পেছনে ভূমিকা রাখেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব। একইভাবে শেখ হাসিনার সফল রাষ্ট্রনায়ক হওয়ার পেছনেও শেখ রেহানার অনুরূপ ভূমিকা রাখছেন।
শেখ রেহানার স্বামী ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ও ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। তাঁদের বিয়ে হয়েছিল লন্ডনের কিলবার্নে বঙ্গবন্ধুর ফুফাতো ভাই মোমিনুল হক খোকার বাড়িতে, ১৯৭৭ সালের জুলাই মাসে। শেখ রেহানার তিন ছেলেমেয়ে। তাদের মধ্যে ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, বড় মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক এবং ছোট মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী। বড় মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লেবার পার্টির একজন সংসদ সদস্য। ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত এবং আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের ট্রাস্ট্রি। আর সবার ছোট আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী লন্ডনে ‘কন্ট্রোল রিস্কস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের গ্লোবাল রিস্ক অ্যানালাইসিস সম্পাদক।
রোববার (২৩ জুন) দুপুর আড়াইটায় আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী তথা‘প্লাটিনাম জয়ন্তী’ উপলক্ষে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন, বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। এরপর ছিল আলোচনা সভা ও সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান। আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন।