বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী কাজী জাহিদের সঙ্গে ফেসবুকে বন্ধুত্ব হয় সুন্দরী, স্মার্ট এক নেপালি তরুণীর। ওই তরুণীর সঙ্গে মেসেঞ্জারে নিয়মিত চ্যাট করেন জাহিদ।
সম্পর্ক আরও গভীর হলে একে অপরের ব্যক্তিগত ছবি শেয়ার করেন। ভিডিও কলে তারা খোলামেলা কথা বলেন।জাহিদের অজান্তেই নেপালি ওই সুন্দরী তরুণী কৌশলে স্ক্রিন রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমে সেই ভিডিও চ্যাট ধারণ করেন। ফেসবুকে বন্ধুত্বের দুই মাসের মাথায় একদিন নেপালি তরুণী জাহিদকে জানান তার বাবা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। লিভার ও কিডনি জটিলতা দেখা দিয়েছে। দ্রুতই অপারেশন করতে হবে,
এজন্য অনেক টাকা প্রয়োজন। জাহিদের কাছে তিনি দুই লাখ টাকা চান। জাহিদ এক লাখ টাকা দিলে তরুণী বলেন, এ টাকায় হবে না। জাহিদের কাছে ফের পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে পূর্বে ধারণকৃত ছবি ও ভিডিও জাহিদের ঘনিষ্ঠদের ফেসবুক মেসেঞ্জারে পাঠাবে বলে হুমকি দেন। নিরুপায় হয়ে জাহিদ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার ইউনিটে অভিযোগ করেন।
ডিবির তদন্ত কর্মকর্তা জানান, নেপালি তরুণীর মাধ্যমে প্রতারিত ভুক্তভোগী বিদেশে লোক পাঠানোর ব্যবসা করেন। তিনি ওই নেপালি তরুণীর সঙ্গে সম্পর্কের পর নিজের তথ্য দেন। ভুক্তভোগীর স্ত্রী ও বন্ধুদের ফেসবুকে যুক্ত করেন ওই তরুণী। এরপরই জিম্মি করে তাকে।
কাজী জাহিদের মতো সমাজের প্রতিষ্ঠিত ও ধনাঢ্য অনেক ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বন্ধুত্বের ফাঁদে পা দিয়ে অর্থকড়ি ও সম্মান খোয়াচ্ছেন। চক্রের সুন্দরী ও স্মার্ট মেয়েরা ফেসবুকে বন্ধুত্ব থেকে কায়দা করে গড়ে তোলে প্রেমের সম্পর্ক। নিজেদের মধ্যে খোলামেলা আলাপচারিতার ভিডিও রেকর্ড করেন চক্রের সদস্যরা। পরে জিম্মি করেন টার্গেট ব্যক্তিকে। মাসের পর মাস চলছে এ ধরনের প্রতারণা। চক্রটি দেশের বাইরে অবস্থান করে হুন্ডি ও ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এ ধরনের ভুক্তভোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেলেও আইনি সহায়তা নিচ্ছেন না। ভুক্তভোগীদের ৯০ ভাগই সামাজিক ও পারিবারিক মর্যাদাহানির ভয়ে নিয়মিত টাকা দিচ্ছেন চক্রটিকে। আর যারা অভিযোগ করছেন, তাদের একটি বড় অংশ মামলা করতে রাজি হয় না।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারের ফলে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রতিনিয়ত সাইবার জগতে প্রবেশ করছেন। তাদের মধ্যে কিশোর-কিশোরী ও বয়োবৃদ্ধরাও আছেন। কিন্তু সাইবার সিকিউরিটি অ্যাওয়ারনেস বিষয়ে তাদের অধিকাংশের কোনো জ্ঞান নেই। এ কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।
যুগান্তরের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের বেশির ভাগই পারিবারিকভাবে সুখী নন। আবার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন থাকায় অনেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। ঠিক সেই মুহূর্তে ফেসবুকে সুন্দরী কোনো তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়। ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগই জানান, প্রতারক তরুণীরা দেশের বাইরে অবস্থান করছেন বলে জনিয়ে নানাভাবে প্রলোভনও দেখান।
বন্ধুত্বের এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে ভিডিও কলে খোলামেলা ঘনিষ্ঠ আলাপচারিতা ও ব্যক্তিগত ছবি শেয়ার করেন তারা। পরে ফোনের স্ক্রিন রেকর্ডারে রেকর্ড করে টাকা দাবি করেন ওই তরুণীরা। টাকা দাবির বিষয়টিও কৌশলে করছেন। কখনো মা অসুস্থ আবার কখনো নিজেই অসুস্থ-এমন কথা বলে টাকা ধার নেন।