সোনালী সিলেট ডেস্ক ঃ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে ১৫ নভেম্বর। এদিন থেকে শুরু হয়েছে নির্বাচনের কাউন্টডাউন। আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বিএনপিবিহীন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ।
বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় এবারের নির্বাচনে নতুন কৌশল অবলম্ব করেছে ক্ষমতাসী দল আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে ভোটারদের ‘আশানুরূপ’ উপস্থিতি ঘটাতে নৌকাবঞ্চিত নেতাদের স্বতন্ত্রের মোড়কে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ রেখেছে। এছাড়া সরকারঘোষিত প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগ করেছে আসন ভাগাভাগি। এ ভাগাভাগির কবলে পড়তে পড়তে কোনোমতে রক্ষা পেয়েছেন সিলেট-৩ আসনের নৌকার মাঝি, এ আসনে গত উপনির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব।
আসনটিতে নৌকা থাকলেও লড়ছেন লাঙ্গলের প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক। এছাড়াও রয়েছেন আরেক শক্ত প্রার্থী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল। ট্রাক প্রতীকে তিনি নির্বাচন করছেন স্বতন্ত্র হিসেবে। সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে মূলত আলোচনায় রয়েছেন এ তিনজন।
যদিও আসনটিতে প্রার্থী হয়েছেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)-এর আনোয়ার হোসেন আফরোজ, বাংলাদেশ ইসলামি ঐক্যফ্রন্টের শেখ জাহেদুর রহমান (মাসুম), ইসলামি ঐক্যাজোটের মো. মইনুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা কফিল আহমদ চৌধুরী (স্বতন্ত্র) এবং মো. ফকরুল ইসলাম (স্বতন্ত্র)। তবে তারা নেই আলোচনায়।
এদিকে, সিলেট-৩ আসনের বর্তমান এমপি হাবিবুর রহমান হাবিবকে গত উপনির্বাচনের মতো এবারও ‘দৈত নাগরিক অভিযোগে’ চ্যালেঞ্জ করেন আতিক। তবে গতবারের মতো এবারও নির্বাচন কমিশন তা বাতিল করে হাবিবের প্রার্থিতা বহাল রাখে। এমপি হাবিবের বিরুদ্ধে বার বার অভিযোগের আঙ্গুল তোলা আতিকের বিরুদ্ধেও এবার উঠেছে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ।
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) জাপা’র প্রার্থী আতিক মোগলাবাজার থানার জাহানপুর গ্রামস্থ তাঁর নিজ বাড়িতে বড় আয়োজন করে ২১টি গরু জবাই করে স্থানীয় ভোটার ও এলাকাবাসীকে ভূরিভোজ করিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। তবে বিষয়টি ‘অবৈধ’ বলতে নারাজ জাপা’র প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক।
তিনি ২১টি গরু জবাই করে দাওয়াত খাওয়ানোর কথা স্বীকার করে সিলেটভিউ-কে বলেন, ‘আমি এলাকার মানুষ ও আত্নীয়-স্বজনদের খাইয়েছি। এতে আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়নি।’
বৃহস্পতিবার আতিক তাঁর বাড়িতে বড় আয়োজন করে কয়েক হাজার মানুষকে ভূরিভোজ করানোর পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। নির্বাচনের মৌসুম ছাড়া অন্য সময় এলাকায় বা জনগণের পাশে না থাকা আতিক ২১ গরু জবাই করে খাওয়ালেও মানুষ তাকে ভোট দেবে না বলে স্থানীয় অনেকের মন্তব্য। ফলে যারা ভূরিভোজে অংশ নিয়েছেন তারা আতিকের খেয়েও ভোট দিতে পারেন নৌকা বা ট্রাকে।
বিভিন্ন এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট-৩ আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ভোটের মাঠে হাবিব ও দুলালের তৎপরতা দেখা গেলেও জাপা’র প্রার্থী আতিকুর রহমানর আতিককে মাঠে দেখা যায়নি। মূলতঃ বৃহস্পতিবার বড় ভূরিভোজের আয়োজন করে দৃশ্যপটে এসেছেন তিনি।
এদিকে, দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বাসিন্দা হাবিব ও আতিক প্রার্থী থাকায় ওই এলাকার ভোটস্রোত এলোমেলো হয়ে যাবার সম্ভাবনাও রয়েছে। অন্যদিকে নিজ এলাকা বালাগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী ঘরানার একক স্বতন্ত্র প্রার্থী ডাক্তার দুলাল। তাঁর অবস্থা বালাগঞ্জে সুবিধাজনক থাকলেও গত ২ বছরে এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব বালাগঞ্জে করিয়েছেন বেশ উন্নয়নকাজ। ফলে হাবিবের ভোটও রয়েছে সেখানে।
অপরদিকে, দক্ষিণ সুরমা উপজেলার অন্তর্ভুক্ত মোগলাবাজার থানা এলাকায় ভালো অবস্থান তৈরি করেছেন ডা. দুলাল। তার সাথে আছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী। মোগলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা ফখরুল ইসলাম শাইস্তাও প্রকাশ্যে ডা. দুলালের পক্ষে কাজ করছেন।
আগামী ৭ জানুয়ারির আগে বলা যাচ্ছে না- শেষ হাসি কার। তবে ভোটারদের ভোট কাড়তে সমানতালে কাজ করে যাচ্ছেন হাবিব ও দুলাল।
আর মাঠে নেমেই অভিযুক্ত হওয়া আতিকের ভূরিভোজের আয়োজনের বিষয়ে সিলেট জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান সিলেটভিউ-কে বলেন, ‘বিষয়টি অবগত নই। খোঁজ নিয়ে দেখছি। আচরণবিধি লঙ্ঘিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সুত্রঃ সিলেট ভিউ ২৪/ জা