গভীর রাতে নদীর বাঁধে ভাঙন, ৫ শতাধিক লোক পানিবন্দি

প্রকাশিত: ৮:১৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৩, ২০১৯

গভীর রাতে নদীর বাঁধে ভাঙন, ৫ শতাধিক লোক পানিবন্দি

সোনালী সিলেট ডেস্ক ::: গত কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের পৌর এলাকার রামপাশা এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে দুটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ৫ শতাধিক লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

এ দিকে মনু নদী বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার, ধলাই নদীর পানি ২৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলেন জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী।

তিনি বলেন, রাত ২টার দিকে কমলগঞ্জ পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের রামপাশা এলাকায় ধলাই নদীর প্রায় ৭০ ফুট বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। এর ফলে গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। তবে সকাল থেকে পানি কমছে। পানি কমে গেলে বাঁধ দ্রুত মেরামত করা হবে। ধলাই নদীর পানিতে ৮, ৯ ও সদর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে পানি প্রবেশ করে রাস্তাঘাট কিছু বাড়ির আঙ্গিনায় পানি উঠেছে। তবে পানি বাড়তে থাকলে মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে।

উজানের ভারতীয় ঢলের পানি নেমে এসে শুক্রবার রাত ৯টা থেকে ধলাই নদীতে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে। এ সময় পানি বিপদ সীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ক্রমে পানি বেড়ে রাত ২টায় রামপাশা গ্রামের শ্যামল পাল চৌধুরীর বাড়ি সংলগ্ন এলাকার প্রায় ১০০ ফুট পরিমাণ প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে রামপাশা ও কুমড়াকাপন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

কমলগঞ্জ পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, এ এলাকার প্রতিরক্ষা বাঁধ দীর্ঘদিন যাবত ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় বৃহস্পতিবার বিকালে ৪টি পরিবার যথাক্রমে জয়ধন মালাকার, যোগিন্দ্র মালাকার, মনিন্দ্র মালাকার ও সুনিল মালাকারের পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়। শুক্রবার বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার পর থেকে শনিবার পর্যন্ত রামপাশা গ্রামের শ্যামল পাল চৌধুরী, নির্মল পাল চৌধুরী, প্রত্যুষ ধর, প্রতীম ধর, পদন্য পাল, অমর পাল চৌধুরী, মনির হোসেন, খোকন মালাকার , গৌতম কর, সত্তার মিয়া, নিধু করসহ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

কমলগঞ্জ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আনোয়ার হোসেন ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাসেল মতলিব তরফদার বলেন, গভীর রাতে বাঁধ ভেঙ্গে ঢলের পানি প্রবেশ করে এ প্লাবনের সৃষ্টি করেছে। প্লাবনের পানিতে রামপাশা ও কুমড়াকাপন গ্রামের ব্যাপক এলাকার ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। শনিবার সকাল থেকে পানি গিয়ে ছাইয়াখালি হাওরে জমা হতে শুরু করে।

কাউন্সিলররা আরও বলেন, আগে থেকেই পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল এ এলাকার প্রতিরক্ষা বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ও পানিবন্দি পরিবারগুলোকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন রামপাশা ও কুমড়াকাপন গ্রামসহ পুরো কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদীর উপর সার্বিক নজরদারি করছে।

ঘটনাস্থলে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা খালিদ বিন ওয়ালিদ বলেন, এ এলাকার প্রতিরক্ষা বাঁধসহ পুরো ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধে পাথরের ব্লক স্থাপনে একটি প্রস্তাব ২ মাস আগে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ প্রস্তাব পাশ হলে প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ শুরু হবে। আপাতত শুক্রবার রাতে ভেঙ্গে যাওয়া অংশে মেরামত কাজ করার জন্য একজন ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। পানি কমলে কাজ শুরু হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শঙ্কর চক্রবর্তী রামপাশা গ্রামে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবনের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাস্থলে তাদের দুইজন কর্মকর্তা নজরদারি করছেন। তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করছেন। নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, উজানে তেমন বৃষ্টি না হলে আশঙ্কার কিছু নেই। তবে উজানে ভারী বৃষ্টি হলে কমলগঞ্জে ধলাই নদীতে পানি বেড়ে যেতে পারে।

সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন
0Shares
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম