উন্নতি চাইলে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি মেনে নিতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৫:৫৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ৮, ২০১৯

উন্নতি চাইলে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি মেনে নিতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

সোনালী সিলেট ডেস্ক :::  দেশের অর্থনীতির উন্নতি চাইলে গ্যাসের যে মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে- তা মেনে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার (৮ জুলাই) গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এই কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১ শতাংশ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এর কারণ আমরা এনার্জি ক্ষেত্রে যথেষ্ট মনোযোগ দিয়েছি। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পেরেছি এবং গ্যাস আমাদের আমদানি করতে হচ্ছে। এলএনজি গ্যাস আমদানির জন্য খরচ যথেষ্ট বেশি পড়ে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, দাম যেটুকু বাড়ানো হয়েছে, সেটুকু যদি বাড়ানো না হয় তাহলে আমাদের সামনে দুটি পথ আছে- হয় আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি না বাড়ে, সেজন্য এলএনজি আমদানি কমিয়ে দিয়ে এনার্জির ক্ষেত্র সংকুচিত করে ফেলব। অর্থনীতির উন্নতি হবে না। যদি উন্নতি চান এটাকে মেনে নিতে হবে।

গ্যাসের দাম অতিরিক্ত বাড়ানো হলো কিনা এবং এলএনজি আমদানিতে দাম বেশি পড়ছে কিনা এই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এই প্রশ্নটা আসবে আমি জানি। তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো আমাদের গ্যাসের প্রয়োজন আছে কিনা। আমরা যদি উন্নয়ন করতে চাই তাহলে এনার্জি একটা বিষয়।’ তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের জন্য গ্যাস লাগবে, বিদ্যুৎ লাগবে। এলএনজি আমদানিতে দাম বেশি লাগছে এটা স্বাভাবিক। তবে দাম বাড়ানোর পরও ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।’ তিনি সাংবাদিকদের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘তাহলে একটা কাজ করি? যে দামে কিনবো সেই দামে বেচবো?’

তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি লক্ষ্য করে দেখবেন ২০০৮ সাল পর্যন্ত জিডিপি কত বেড়েছে। আমরা ৮ দশমিক ১ ভাগ পর্যন্ত জিডিপি অর্জন করতে সক্ষম করতে পেরেছি। আমরা এটা পেরেছি কারণ এনার্জি ক্ষেত্রে যথেষ্ট মনোযোগ দিয়েছি। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পেরেছি। তবে গ্যাস আমদানি করতে হচ্ছে। এলএনজি আমদানিতে খরচ বেশি পড়ে। গ্যাসের দাম না বাড়ানোর দুটি উপায় আছে। আমরা জিডিপি না বাড়াই, এলএনজি আমদানি করবো না, গ্যাসের দামও বাড়বে না। আরেকটি হলো উন্নয়ন হবে না। আর যদি সত্যি অর্থনৈতিক উন্নতি চান তাহলে এটা মেনে নিতেই হবে।’

প্র্যধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘শুধু আমাদের দেশে না, বিদেশেও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। ২০০০ সালে আমার কাছে একটা প্রস্তাব এসেছিল গ্যাস বিক্রি করবো কিনা, আমি রাজি হইনি। এর খেসারত দিতে হয়েছিল। আমি ২০০১ সালে ভোট বেশি পেয়েও কিন্তু ক্ষমতায় আসতে পারিনি। খালেদা জিয়া মুচলেকা দিয়েছিল, ক্ষমতায় আসলে গ্যাস বিক্রি করবে। আমি চাই গ্যাস আমার দেশের মানুষের কাজে লাগবে। দেশের জন্য রিজার্ভ রাখবো। তারপর যদি বাঁচে তাহলে বিক্রি করবো। তবে কত গ্যাস আছে আমাকে জানতে হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে হবে। এর জন্য এলএনজি আমদানি করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রতি ঘনমিটার এলএনজি আমদানিতে আমাদের খরচ পড়ে ৬১.১২ টাকা। সেটা এখন আমরা কত টাকায় বিক্রি করছি? এর চেয়ে কম দামে কী করে দেওয়া যায়? অনেকে আন্দোলন করে বলেছেন ভারতে দাম কমেছে। ভারতে এলাকা ভেদে গৃহস্থালীর জন্য গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটার ৩০ থেকে ৩৭ টাকা। বাংলাদেশ দিচ্ছে ১২. ৬০ টাকা। শিল্পে আমরা দিচ্ছ ১০.৭০ টাকা, ভারত দিচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকা। বাণিজ্যিকে আমরা দিচ্ছি ২৩ টাকা। ভারত দিচ্ছে ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা। ভারতে প্রতি বছর দুইবার গ্যাসের দাম এডজাস্ট করে, এপ্রিলে আর অক্টোবরে। সেই নীতিতেই তারা চলে। আমরা ৬১.১২ টাকা নিয়ে এসে এলএনজি দিচ্ছি ৯.৮০ টাকায়। তারপরেও আন্দোলন!’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৪/৫ সালে ভারত পাইপলাইনে করে মিয়ানমারের গ্যাস নিতে চেয়েছিল বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে। খালেদা জিয়া তা দেয়নি। আমি হলে দিতাম ও আমার ভাগটা রেখে দিতাম। তাহলে এলএনজি আমদানি না করলেও চলতো। নেতৃত্ব যদি ভুল করে তার খেসারত জনগণকে দিতে হয়।

তিনি বলেন, ১০ হাজার কোটি টাকার ওপর আমাদের ভর্তুকি দিচ্ছে হচ্ছে। দাম বাড়ানোর পরও ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। তাহলে যে দামে কিনবো সেই দামে বিক্রি করি? ৯টাকারটা ৬১ টাকা করে নেবো? আমাদের আর ভর্তুকি দিতে হবে না! বহুদিন পর হরতাল দিলেন তো এটা পরিবেশের জন্য ভালো।’

শেখ হাসিনা গত ১ জুলাই পাঁচদিনের সরকারি সফরে ঢাকা থেকে চীনে পৌঁছান। ৬ জুলাই দেশে ফিরে আসেন।

সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন
0Shares
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম