সিলেট ২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১৪ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:১৫ পূর্বাহ্ণ, মে ২৬, ২০১৯
সোনালী সিলেট ডেস্ক ::: মা হওয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যা একজন নারী শুধু নয় তথাপি একটি পরিবার, সমাজ এবং দেশের জন্য ও গুরুত্বপূর্ণ। একজন নারী মা হওয়ার মধ্য দিয়ে একজন পরবর্তী প্রজন্মের সদস্য তৈরি করে যান। এই প্রক্রিয়াই চলছে যুগ যুগ ধরে এর ব্যত্যয় হলেই বরং একটা অকল্পনীয় পৃথিবী পাবো আমরা।
মাতৃত্ব শব্দটা যতটা গর্বের ঠিক ততটাই কষ্টের। একজন মায়ের মা হয়ে উঠার গল্প আমরা সাদা চোখে দেখি, যা দেখি তার গভীরতা আমাদের ছুঁয়ে যায় না।
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস একজন মায়ের নিজের শরীরের হরমোনের ক্রমাগত পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে গিয়ে কতটা নাজেহাল অবস্থা হয় তা সেই মা ছাড়া কেউ বুঝবেন না। শরীরের সাথে সাথে মানসিক অবস্থাটারও বেশ পরিবর্তন হয়।
প্রথম তিনমাসের পরবর্তী তিনমাস শরীর ভারী হয়ে যায়, বাচ্চার পূর্নাঙ্গ শরীর তৈরি হয়ে যায় এই সময়টাতে। শারীরিক এবং মানসিক অবস্থার ও হেরফের হয় না। বরং আগের থেকে আরো খারাপ দিকে যায়। আর শেষ তিন মাস তো মায়ের নিজের শরীর নিয়ে হাঁটাচলা, গোসল, খাওয়া, ঘুম সব, কিছুতে ভীষণ প্রভাব ফেলে। একদিকে নিজের শরীরের কষ্ট অন্যদিকে অনাগত সন্তানের প্রসব ঠিক মতো হবে কিনা সে সুস্থ থাকবে কিনা এই সব নিয়েও একজন মা বেশ উদ্বিগ্ন থাকেন।
অনেক ক্ষেত্রে নিজের মৃত্যু নিয়েও আশংকায় থাকেন অনেক মা। আর আমাদের সমাজ যেহেতু ছেলে সন্তানকে বেশি প্রায়োরিটি দেন তখন মা ছেলে হবে না মেয়ে হবে তা নিয়েও চিন্তার অন্ত নেই। এসব তো একজন মায়ের স্বাভাবিক জটিলতা বিহীন সন্তান জন্ম দেওয়ার ঘটনা। দুর্ভাগ্যক্রমে যদি মা’য়ের গর্ভকালীন সময় এবং প্রসবকালীন থেকে প্রসব পরবর্তী সময়ে কোন ধরণের জটিলতার মধ্য দিয়ে যায় তবে তো সে মৃত্যুর স্বাদ প্রায় নিয়েই ফিরে আসে। অনেক সময় তো ওপারে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েই অনেক মা সন্তান ধারণ করে থাকেন শুধু মাত্র মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করবেন বলে এই এত সব ঝড় ঝাপটা সয়েও যখন একজন মা সন্তান জন্ম দেন তখন ও তার যন্ত্রণা শেষ হয় না।
সেই মা’কে রাতের পর রাত জেগে সন্তান সামলে সমস্ত ঘরদোর সামলে পরিবারের সকল সদস্যের দেখাশোনা করে অতঃপর নিজের যত্নের জন্য একটু সময় পেলে ও সন্তানের কান্নার জন্য বা তাকে আদর করার জন্য নিজের সেই সময়টুকুও তিনি হাসিমুখে বিসর্জন দেন। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় একজন মা’কে সন্তান উৎপাদনের মেশিন হিসেবেই দেখে। কিন্তু সেই মেশিনের যে যত্নের প্রয়োজন তা কেউ চিন্তা করে না। ব্যতিক্রমী পরিবারগুলো এখানে উদাহরণ হিসেবে আসবে না কারণ এরা সংখ্যায় নগণ্য।
একজন নারী যখন একটা সন্তান জন্ম দিলেন ও বা কোন রকমে নিজেকে কষ্ট দিয়ে সেখানেই তার যুদ্ধ থেমে নেই। পরবর্তী সন্তান নেওয়ার জন্য পরিবার, প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজনের আবদারে আবারো নিজের কোন প্ল্যান না থাকলেও তাদের শখ আহলাদ মেটাতে আবার ও নিজেকে এই মহাযুদ্ধের দিকে ধাবিত করতে হয়। সবার সাথে স্বামী নামক মানুষটার নীরব সমর্থন থাকে প্রায়শই। অথচ এরা কেউই সেই মা’কে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাহায্য করতে আসে না৷ কোন নারী যদিও নিজের মনোবল অটুট রেখে পরবর্তী সন্তান নিজের ইচ্ছায় নিজের সুবিধা মতন নিতে চান এবং পদ্ধতি গ্রহণ করেন তাহলে সেই নারীকে কথা দিয়ে অকথ্য নির্যাতন করা হয় মানসিক ভাবে।
শরীর সম্পর্কীয়, জন্মদান সম্পর্কিত সন্তান ধারণের ক্ষমতা সম্পর্কে বিভিন্ন ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মানসিকভাবে দুর্বল করার চেষ্টা করা হয়, তাকে ভয় দেখানো হয় কোন পদ্ধতি নিলে তার বাচ্চা হবে না আর। অথচ কেউ জানতেই চেষ্টা করে না আসলেই কার্যকরী পদ্ধতি নিলে সন্তান ধারণে কোন সমস্যা হয় কি না। ক্রমাগতই এসব যন্ত্রণার মুখোমুখি হতে হয় এ দেশের বেশিরভাগ নারীকে। এতে বাদ যায় না শহরের এলিট শ্রেণির নারীরাও।
অথচ একজন মা তার গর্ভে সন্তান কখন নিতে চান এই নিয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন স্বামী স্ত্রী দুজনে। এটা একান্তই নিজেদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কোন দম্পতি চাইলে তারা বাচ্চা নাও নিতে পারেন তাতে অন্য কারো জোর করার কিছু নেই। কেউ চাইলে একটা সন্তান নিয়েই সুখে থাকতে পারেন। এতে আরেকটা সন্তান নিন বা নিচ্ছেন না কেন? ভাবীর কি কোন সমস্যা এসব বলা জাস্ট অভদ্রতা। আপনার মূর্খ টাইপ প্রশ্নে একজন মানু্ষ বিব্রত বা কষ্ট পেতে পারেন।
আমাদের নিজেদের মনস্কামনা পূরণ করার জন্য কাউকে সন্তান নেওয়ার জন্য যেমন জোর করতে পারিনা তেমনি সন্তান জন্ম নিলে তার যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব ও এড়িয়ে যেতে পারি না।
মাতৃত্ব যেমন আমাদের জন্য গর্বের, তেমনি আমাদের আচরণের জন্য সেটা অভিশাপে পরিণত হতে বেশি সময় লাগে না।
প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ তাজুল ইসলাম,
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নাঈমুর রহমান নাঈম
উপদেষ্টা : উস্তার আলী
সম্পাদক কর্তৃক বার্তা অফসেট প্রেস, লিয়াকত ভবন, জল্লারপাড় রোড, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও প্রধান কার্যালয় : সামসুদ্দিন মার্কেট,(২য় তলা) পুরাতন পুলের মুখ ভার্থখলা,দক্ষিণ সুরমা সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ফোন : ০২৯৯৬৬৩২৩০১
মোবাইল : ০১৭১১-৩৯৯৬৬৬, ০১৭৩৩-৫৭৫৯২০ (সম্পাদক ও প্রকাশক)
ই-মেইল : sonalysylhet2016@gmail.com
Web : www.sonalysylhet.net
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি