সিলেট ২৩শে মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ৩রা জিলকদ, ১৪৪৪ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:৪০ পূর্বাহ্ণ, মে ১৪, ২০১৯
সোনালী সিলেট ডেস্ক ::: চার মাস আগে শামীম আহমদের সঙ্গে হেলেনা বেগমের (২০) বিয়ে হয়ছে। বিয়ের পর এবার প্রথম রমজান। সিলেটের রেওয়াজ হিসেবে (১০ মে) সিলেটের জৈন্তাপুরের ঘিলাতৈল গ্রামে বধু হেলেনার বাবার বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়িতে ইফতারি পাঠানো হয়। কিন্তু সেই ইফতার সামগ্রী শ্বশুড়বাড়ির লোকজনের মনমত হয়নি, সেই ইফতার নিয়ে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের গালমন্দ শুনতে হয় হেলেনাকে।
এরই জের ধরে শনিবার বিকেলে নিজ ঘরে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় রশি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন হেলেনা।
কেবল একজন হেলেনা নয়, এভাবে আরও অনেক হেলেনাকে বাবার বাড়ি থেকে আসা ইফতার নিয়ে শুিনতে হয় কটু কথা।
বিয়ের পর রমজান মাসে বাবার বাড়ি থেকে মেয়ের বাড়িতে ইফতার সামগ্রী পাঠানো রেওয়াজ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে সিলেটে। এই রেওয়াজ প্রায় নিয়মেই পরিণত হয়েছে এখন। কোনো মেয়ের বাবার বাড়ি থেকে ইফতার সামগ্রী না এলে শ্বশুড় বাড়িতে নানা কথা শুনতে হয় ওই মেয়েকে। আবার প্রেরিত ইফতারসামগ্রী মনঃপুত না হলেও কটুকথা শুনতে হয়।
এই রেওয়াজ নিয়মে পরিণত হওয়ায় বিপাকে পড়তে হয় নিম্নিবত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের। সংসারের খরচ সামলিয়ে মেয়ের বাড়িতে ইফতারসামগ্রী পাঠানোর অর্থ জোগাড়ে হিমশিম খেতে হয় তাদের।
যেমন ধরা যাক, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার তারিক আহমেদের কথা। রমজানের ১ মাস আগে ৮ লক্ষ টাকা খরচ করে একমাত্র বোনের বিয়ে দিয়েছেন। একমাত্র বোন তাই ধুমধামে বিয়ে দিতে গিয়ে ৫ লাখ টাকা ঋণ করে ফেলছেন। বিয়ের একমাস পর ঋণের চাপের মধ্যেই এসেছে রমজান তাই সিলেট ঐতিহ্য মেনে বোনের বাড়ী ইফতার সামগ্রী পাঠাতে হবে কিন্তু হাতে টাকাও নেই। এদিকে ইফতার না পাঠালে বোনকে কথা শুনতে হবে, পাড়া প্রতিবেশীর কাছে বোনের সম্মান থাকবে না। তাই বাধ্য হয়ে হালের গরুটি ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন তিনি। সেই টাকা দিয়ে ইফতার সামগ্রী নিয়ে যান।
ইফতার পাঠানো নিয়ে রীতিমত প্রতিযোগীতাই চলে সিলেটে। কার শ্বশুরবাড়ি থেকে কত ভালো ইফতার সামগ্রী এলো, কে তার শ্বশুরবাড়ির ইফতার খাওয়াতে কতবেশি মানুষকে দাওয়াত করলো- এসব নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগীতায় পিষ্ট হতে হয় অর্থনৈতিকভাবে অস্বচ্ছলদের।
ফলে এই প্রথা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে জোরেসোরেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘মেয়ের বাড়িতে ইফতার’ প্রেরণের বিরুদ্ধে বলছেন অনেকেই। ‘মেয়ের বাড়িতে ইফতার’কে না বলুন এমন আওয়াজও উঠেছে। আবার কেউ এটি সিলেটের ঐতিহ্য দাবি করে তা রক্ষার পক্ষেও মত দিচ্ছেন।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সমাজকর্মী আব্দুল কায়ুম জানান, এই প্রথায় একজনের উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আমার চোখের সামনে অনেকে সুদে টাকা এনে, কেউ নিজের জমি বিক্রি করেও ইফতারি পাঠান। আমি বিয়ে করেছি ৬ বছর কিন্তু আজ পর্যন্ত আমি শ্বশুর বাড়ি থেকে ইফতারি নেইনি।
সিলেটের সামাজিক সংগঠক আব্দুল করিম কিম বলেন, এই প্রথা থেকে বর্তমান সময়ে অনেকেই বের হয়ে আসছেন। রমজানে মেয়ের বাড়িতে ইফতার দেয়াটা অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের জন্য মেয়ের মুখ বড় করতে যেয়ে বিত্তের প্রদর্শনীতে পরিণত করা হয়েছে। আবার দরিদ্র মা-বাবাকে এই প্রথা পালন করতে গিয়ে ঋণগ্রস্থ হতে হয়।
এমন প্রথা ইসলামে নেই জানিয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ফাউন্ডেশনের মহা-পরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল বলেন, ইসলামে এমন কোন বিধান নেই। সংযমের মাসে কারো উপর জোর করে ইফতারের আয়োজন চাপিয়ে দেওয়া অন্যায়। যার যা সামর্থ আছে তা দিয়েই ইফতার করবে।
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুনপ্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ তাজুল ইসলাম,
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নাঈমুর রহমান নাঈম
উপদেষ্টা : উস্তার আলী
সম্পাদক কর্তৃক বার্তা অফসেট প্রেস, লিয়াকত ভবন, জল্লারপাড় রোড, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও প্রধান কার্যালয় : সামসুদ্দিন মার্কেট,(২য় তলা) পুরাতন পুলের মুখ ভার্থখলা,দক্ষিণ সুরমা সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ফোন : ০২৯৯৬৬৩২৩০১
মোবাইল : ০১৭১১-৩৯৯৬৬৬, ০১৭৩৩-৫৭৫৯২০ (সম্পাদক ও প্রকাশক)
ই-মেইল : sonalysylhet2016@gmail.com
Web : www.sonalysylhet.net
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি