সিলেট ২৮শে জানুয়ারি, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই মাঘ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ | ৬ই রজব, ১৪৪৪ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২০, ২০১৮
একাত্তরের ২১ নভেম্বর শ্বাসরুদ্ধকর ১২ ঘন্টা
॥ জেড, এম, শামসুল ॥
২১ নভেম্বর ১৯৭১ সালে এই দিনে জকিগঞ্জ থানা হানাদার মুক্ত হয় । দীর্ঘ ১২ ঘন্টা শ্বাসরুদ্ধ কর অবস্থার মধ্য দিয়ে ভারতীয় মিত্র বাহির সহযোগীতায় অসংখ্যক আহত নিহতের মধ্য দিয়ে জকিগঞ্জ থানা সদর সহ আশ-পাশ এলাকা শুত্রুমুক্ত হয়। এই দিনের শ্বাসরুদ্ধ কর অবস্থার কথা স্মরণ হলে এখন আঁতকে উঠতে হয়। ঈদের দিন সন্ধ্যার পূর্বেই জকিগঞ্জে সুরমা ও কুশিয়ার নদী পার হয়ে মুক্তি বাহিনী বাংলার গ্রামে গ্রামে প্রবেশ করে। দীর্ঘ ২২৩ দিনের মধ্যে নদীর তীর কি ? নিজের বসত বাড়ীতে শান্তিতে ছিলাম কোন মর্হুতে বিপদ আসবে। তা নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় দিন কাঠাতে হয়েছে মাত্র কিছু দিন পূর্বে স্থানীয় লোহার মহল গ্রামের ১২জন কে দরে নিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে ঘাতক বাহিনী। এর ২/৩ দিন পরেই এক জুময়াবার আমার পিতাকে স্থানীয় রাজাকার ও পাঞ্জাবী সেনাবাহিনীর কুখ্যাত বশরাত ক্যাপন্টেন ও তার সহযোগীরা ভুইয়ার মোরা জামে মসজিদেয় প্রবেশ করে নামাজরত অবস্থায় আটক করে মুসল্লীদের সামনে চরম নির্যাতন চালায় । এসময় স্থানীয় দালাল চক্রের কথা মত ১০ হাজার টাকা উৎকোচ দিয়ে ছাড়িয়ে আনলেও তবু শান্তি ছিল না। দালাল চক্র আমাকে বিচ্ছু নাম দিয়ে হত্যা করার চেষ্টা চালায়। তখন এলাকার কয়েক জন রাজাকার আমাদের জীবন রক্ষায় এবং পাঞ্জাবী ও দালাল চক্রের হাত থেকে লুকিয়ে রাখতে যথেষ্ট সহযোগীতা করেছে। এ সময় অন্যান্য দিনের মত ঈদের দিন বাড়ীতে কিছু সময় কাটিয়ে সন্ধ্যার পূর্বেই বাড়ী থেকে পালিয়ে যাওয়ার মহুর্তে হঠাৎ আমার বাবার এক বিশ্বস্থ বন্ধুর ভাই জফি মিয়া, বাড়ীর উত্তর পাশে পেলে তিনি আমাদেরকে পালিয়ে না যাওয়ার জন্য উপদেশ দিলেন। এবং বললেন আজ যে ভাবেই হউক মুক্তি যোদ্ধারা জকিগঞ্জে অপরাশেন চালাবে। এই অপারেশন সফল হবে। সত্যি কিছুক্ষণ পর আমাদের বাড়ীর আশ-পাশে পরিচিত অপরিচিত ভিক্ষুক বেশি মুক্তি যোদ্ধাদের আনা গুনা দেখে বুঝতে দেরি হলনা। যে মুক্তি যোদ্ধারা গ্রাম গঞ্জে প্রবেশ করে ফেলছে, তাই আমরা বাড়িতে ফিরে আসার পথে আমার পাশের গ্রামের মুক্তি যোদ্ধা আব্দুল হামিদ (হামিন্দ আলী), সহ কয়েক জন পেয়ে গেলাম। মনে অনেক সাহস হল । সন্ধ্যার সাথে সাথে বাড়ীতেই প্রবেশ করতেই দেখা হল স্থানীয় লোহার মহল, খাপনা, লামার গ্রামের, কয়েক জন মুক্তি যোদ্ধা আমাদের নারিকেল গাছের নিচে বসে আমাদের অপেক্ষা করছেন।
রাত্রি ঘণার সাথে সাথে জকিগঞ্জের তিন দিক ভারত থেকে গুলি ও মাটারের শব্দ ভেসে আসতে শুরু করল। নদীর তীরবর্তী বাড়ী গুলো থেকে লোকজন স্থাবর অস্থাবর জিনিস পত্র পেলে নিরাপদ আশ্রয় খোজতে শুরু করল। নদীর তীরে অবস্থিত ব্যাংকার গুলো ছেড়ে রাজাকার ও পাঞ্জাবীরা জকিগঞ্জ মুখি হয়ে স্থান ত্যাগ করতে শুরু করল। এসময় জকিগঞ্জে ভিতর ও বাহির থেকে মরণ পন যুদ্ধে ভোর ৫টায় জকিগঞ্জ থানা সদর শত্র“ মুক্ত হয়। বিকাল ৫টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত এ ১২ ঘন্টা হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধের ডামাঢুলে এবং জকিগঞ্জ এলাকা ভূমি কম্পের মত কম্পিত হয়ে উঠে ছিল। এ অবস্থায় জীবন বাজি রেখে মুক্তিযোদ্ধারা জকিগঞ্জ শত্র“ মুক্ত করে। এসময় ভারতীয় মিত্র বাহিনী মেজর চমন লাল সহ অসংখ্য মুক্তি যোদ্ধা হতাহত হন। জকিগঞ্জ শত্র“ মুক্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে দেশ প্রেমিক জনতা ঘর ছেরে নদী তীর বর্তী অসংখ্যক ব্যাংকারে হানা দেয়। এবং পাঞ্জাবী রাজাকারদের আটক করে। স্বাধীনতা প্রেমিক জনতার ভীড় জমে উঠে থানা সদরে এদিন আটগ্রামে হানাদার বাহিনীর সাথে মুখোমুখি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে অনেক হানাদার ও মিত্র বাহিনী মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণ হারান। ২২ নভেম্বর হানাদার বাহিনী কানাইঘাট এর দিকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। জকিগঞ্জ হানাদার মুক্ত হওয়ার পর ২২ নভেম্বর সকালে জকিগঞ্জ থানা সদরে প্রথম প্রবেশ করেন, তৎকালিন এম,পি, এম,এর লতিফ, ইছমত আহমদ চৌধুরী, আব্দুল মঈদ চৌধুরী, অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। এদিন জকিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দাউদ হায়দারকে জকিগঞ্জের বেসামরিক প্রশাসক নিয়োগ করেন এবং শত্র“ মুক্ত এলাকায় শান্তি শৃংখলা বজায় রাখতে বীর মুক্তিযোদ্ধা স্পেশাল কমান্ডার এনাম চৌধুরী কে প্রধান করে মুক্তিযোদ্ধা স্পেশাল কমান্ডার মাসুক উদ্দিন আহমেদকে উপপাদান, ও খলিল উদ্দিনকে সহকারী কামান্ডার নিয়োগ করে প্রশাসনিক কর্মকান্ড শুরু করা হয়। এদিনে জকিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ঘোষনা করা হয়্ মহান মুক্তিযোদ্ধে জকিগঞ্জই প্রথম মুক্ত অঞ্চল। এদিন আনুষ্ঠানিক ভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও প্রশাসক নিয়োগ এভাবে সম্পূর্ণ হয়েছিল। এদিনই জকিগঞ্জ হানাদার বাহিনীর সাথে লড়াইয়ের শেষ ঘন্টা বাজল।
এ দিন উপলক্ষে জকিগঞ্জ উপজেলা সদরসহ বিভাগীয় পর্যায়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। ভোর থেকে জকিগঞ্জ থানা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের উদ্যোগে জকিগঞ্জ উপজেলায় র্যালি ও আলোচনা সভা ছাড়াও বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
লেখক : মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সাংবাদিক
প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ তাজুল ইসলাম,
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নাঈমুর রহমান নাঈম
উপদেষ্টা : উস্তার আলী
সম্পাদক কর্তৃক বার্তা অফসেট প্রেস, লিয়াকত ভবন, জল্লারপাড় রোড, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও প্রধান কার্যালয় : সামসুদ্দিন মার্কেট,(২য় তলা) পুরাতন পুলের মুখ ভার্থখলা,দক্ষিণ সুরমা সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ফোন : ০২৯৯৬৬৩২৩০১
মোবাইল : ০১৭১১-৩৯৯৬৬৬, ০১৭৩৩-৫৭৫৯২০ (সম্পাদক ও প্রকাশক)
ই-মেইল : sonalysylhet2016@gmail.com
Web : www.sonalysylhet.net
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি