সিলেট ৯ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে মাঘ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ | ১৮ই রজব, ১৪৪৪ হিজরি
প্রকাশিত: ২:১৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২১, ২০১৯
নির্যাতনের শিকার হয়ে সৌদি থেকে দেশে ফিরলেন সিলেটের ১২ নারী
সোনালী সিলেট ডেস্ক ::: আমার মেয়েটা গতকাল (রবিবার) আসছে সৌদি থেকে। বিমান বন্দর থেকে কল করে বলছে মেয়েটা বেশি নির্যাতিত হইছে। কথা বলতে পারছে না। হাটতে পারছে না। হাসপাতালে ভর্তি করা হইছে। আমার এখন ঢাকায় গিয়া মেয়েটারে দেখার মত অবস্থাও নাই।’ কথাগুলো বলে কান্নায় ভেঙ্গে পরলেন সৌদি আরব থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরে আসা সুনামগঞ্জের হাবিবার বাবা ইউনুছ আলী।
তিনি বলেন, আমার স্ত্রী সুনামগঞ্জে এক বাসায় কাজ করে। আমি জামালগঞ্জে কাজ করি। এখন পর্যন্ত ওর মাকে খবর দিতে পারি নাই। মেয়েটারে দেখার জন্য ঢাকা যাওয়ার মত টাকা নাই আমার কাছে।’
রবিবার (২০ জানুয়ারি) রাত ১০টায় এয়ার এরাবিয়া (এ৯-৫১৫) বিমান যোগে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে সৌদি থেকে দেশে ফিরেন ৮১ জন নারী। এর মধ্যে ১২জন ছিলেন সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। এদের মধ্যে তিন নারীর অবস্থা এতটাই খারাপ ছিলো যে রাতেই বিমান বন্দর থেকে তাদের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ভর্তি ৩ জনের মধ্যে দুজনই হলেন সিলেটের বিভাগের নারী। তাদের একজন হবিগঞ্জ ও আরেকজন সুনামগঞ্জের বাসিন্দা।
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার চানপুর গ্রামের হাবিবা আক্তার (১৮) (ছদ্ধনাম)। চার বোনের মধ্যে সে বড়। মা অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মী ও বাবা বৃদ্ধ তারপরও ছোটখাটো কাজ করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিছুদিন লেখাপড়ার করার পর হাবিবাও নিজ এলাকায় টুকটাক গৃহকর্মীর কাজ শুরু করেন। ২০১৭ সালে সুনামগঞ্জের সিনাকান্দি গ্রামের দালাল তাজু মিয়া তাদের বাড়িতে আসেন। তাজু মিয়া তার বাবাকে প্রলোভন দিয়ে হাবিবাকে সৌদি আরব পাঠানোর জন্য রাজি করান। সৌদি যাবার জন্য তার বাবা ধারদেনা করে বিভিন্ন সময় কয়েক ধাপে প্রায় বিশ হাজার টাকা দেন তাজু মিয়াকে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে সৌদিআরব পাঠানো হয় হাবিবাকে। সেখানে গিয়ে মাত্র দুইবার বাড়িতে টাকা পাঠায় সে। এরপরই সৌদি মালিকদের নির্যাতনের শিকার হয়ে পরিবারের সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় তার।
হাবিবার বাবা বলেন, ‘প্রায় ছয় মাস পর হাবিবা বাড়িতে কল দিয়ে বলে মালিকরা অনেক নির্যাতন করছে। সে আর থাকতে পারবে না সৌদি। আমাদের অভাব দূর করতে ধারদেনা শোধ করতে আমার মেয়েটা নির্যাতন সহ্য করেও কাজ শুরু করে আরেক মালিকের বাসায়। সেখানও তার উপর নির্যাতন চালানো হয়। আমার মেয়েটা কল দিয়ে কান্নাকাটি করতো। আমি দালাল তাজু মিয়ারে কইছি সব কথা। তাজু কয় আমি এখন এই কাজ করি না। তোমার মেয়েরে আমি আইন্না দিতে পারতাম না।
তাজু মিয়ার কাছে কোনো সমাধান না পেয়ে হাবিবার বাবা ট্রাভেলস এজেন্সির দালাল মূসা মিয়াকে কল করেন। দালাল মূসা মিয়াও বলে সে এখন ওই ট্রাভেলসে কাজ কাজ করে না। সে এই ব্যপারে কিছু করতে পারবে না বলে জানায় হাবিবার বাবাকে।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে হবিগঞ্জের পরী বেগম (২০) (ছদ্দনাম)। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লোকড়া ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা পরী। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। কথা বলতে পারছেন না। ঠিকমত চলাফেরা করতে পারছেন না। তার ভাই ঢাকা গিয়েছেন তাকে দেখতে। পরীর ভাই বলেন, ‘গত চৈত্র মাসে দালাল কুতুব আলীর মাধ্যমে সৌদি যায় আমার বইন। আমরা ত জানতাম না ইভাবে নির্যাতন করা হইব আমার বইনরে। হাসপাতালে গিয়া দেখি আমার বইনের হুশ (জ্ঞান)নাই। যখন হুশ আইলো তখন কথা কথা কইতে পারে না। একটু হাত নাড়ছে আমারে দেইক্কা।
ব্রাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ওইদিন নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরে আসা নারীদের মধ্যে ৪ জন হবিগঞ্জ, ৪ জন সুনামগঞ্জ, ৩জন সিলেট ও ১ জন মৌলভীবাজার জেলার। এর মধ্যে সিলেট বিভাগের ২জন নারীকে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ও প্রবাসী কল্যাণ ডেক্সের তত্বাবধানে ওসিসি সেন্টারে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাকী ১০ জন নারী সেদিনই হযরত শাহজালাল (রা.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরেছেন বলে জানান ব্র্যাকের তথ্য কর্মকর্তা আল আমিন নয়ন।
এ ব্যাপারে ব্রাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রোগ্রাম হেড শরিফুর হাসান বলেন, ‘বিদেশে গিয়ে আমার দেশের নারীরা নির্যাতনের শিকার হওয়া কোনো ভাবেই সহ্য করা যায় না। ফেরত আসা নারীদের কন্ঠে নিয়োগকর্তা কর্তৃক নির্মম নির্যাতন ও দূর্বিসহ যন্ত্রনার করুন বর্ণনা শুনলে যে কেউ শিহরিত হবেন। আমার ব্রাকের পক্ষ থেকে যতটুকু পারছি জরুরী সেবা দিচ্ছি। তবে এ ব্যপারে একক ভাবে কাজ করে কোনো ফল আসবে না। কারণ বিদেশ যাওয়ার সময় সবাই পাশে থাকে কিন্তু নির্যাতিত হয়ে ফিরে আসা নারীদের পাশে কেউ থাকেন না। অনেক সময় পরিবারও পাশে থাকে না। এক্ষেত্রে তাদের পূর্ণবাসন করতে সবার সমান ভাবে এগিয়ে আসতে হবে।’
তথ্য সূত্র, সিলেট টুডে ২৪ ডটকম লিংক সংযুক্ত
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুনপ্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ তাজুল ইসলাম,
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নাঈমুর রহমান নাঈম
উপদেষ্টা : উস্তার আলী
সম্পাদক কর্তৃক বার্তা অফসেট প্রেস, লিয়াকত ভবন, জল্লারপাড় রোড, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও প্রধান কার্যালয় : সামসুদ্দিন মার্কেট,(২য় তলা) পুরাতন পুলের মুখ ভার্থখলা,দক্ষিণ সুরমা সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ফোন : ০২৯৯৬৬৩২৩০১
মোবাইল : ০১৭১১-৩৯৯৬৬৬, ০১৭৩৩-৫৭৫৯২০ (সম্পাদক ও প্রকাশক)
ই-মেইল : sonalysylhet2016@gmail.com
Web : www.sonalysylhet.net
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি