ভোলাগঞ্জে চলছে বালু উত্তোলন
এবার পাথর উত্তোলনের অনুমতি চায় কোম্পানীগঞ্জবাসী

প্রকাশিত: ৯:১৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ৯, ২০২০

<span style='color:#C90D0D;font-size:19px;'>ভোলাগঞ্জে চলছে বালু উত্তোলন</span> <br/> এবার পাথর উত্তোলনের অনুমতি চায় কোম্পানীগঞ্জবাসী

মো. মঈন উদ্দিন মিলন, কোম্পানীগঞ্জ থেকে
দেশের বৃহত্তম পাথর কোয়ারি সিলেটের ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি। খনিজ সম্পদে ভরপূর এই পাথর সম্রাজ্য থেকে পাথর আহরণ, ক্রয়-বিক্রয় করে কোম্পানীগঞ্জ তথা দেশের বিভিন্ন জেলার কয়েক লক্ষ শ্রমিকের রুটি রুজির ব্যবস্থা হতো। এমনটি চলে আসছে কয়েকযুগ ধরে। জীবিকার একমাত্র অবলম্বন এই পাথর কোয়ারির উপর ভরসা করেই চলেছে শ্রমিকদের জীবন। তাছাড়া ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি হতে সরকারি কোষাগারে জমা হতো বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। বিভিন্ন ঘটনা-দুর্ঘটনায় আজ সেই পাথর কোয়ারি বন্ধ রয়েছে। এতে দুর্ভোগে রয়েছেন পাথর উত্তোলন ও বাণিজ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট হাজার হাজার মানুষ।

 

জানা যায়, এই কোয়ারির পাথর উত্তোলনের ধারাবাহিকতায় কালের পরিক্রমায় দেশের বিভিন্ন জেলাসহ উপজেলায় বিনিয়োগী হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। নিজেকে জড়িয়েছেন পাথর ব্যবসায়। কাজ না জানা অনেকেই এই ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে বেশ সাবলম্বীও হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে স্টোন ক্রাশার। যার ফলে আবাসনসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণে বেগ পোহাতে হয়নি মালিকদের। বিদ্যুৎ গতিতে বাড়তে থাকে আবাসন। সেই সাথে দেশের প্রধান শহর ও শহরতলীতে গড়ে ওঠে বাণিজ্যিক ভবন। নির্মিত হয় শিক্ষা ভবনও। পূরণ হতে থাকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রেখেছে ভোলাগঞ্জের পাথর। এমনটি মনে করেন উপজেলার সচেতন মহল।

 

স্থানীয়রা জানান, কিছুদিন আগেই কোয়ারিতে বহিরাগত লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের আনাগোনায় বাজারঘাটসহ সবধরনের ব্যবসায় ছিল জমজমাট অবস্থা। একসময় যদিও সনাতন পদ্ধতিতে কোয়ারি সচল ছিল, পরে কিছু অসাধু চক্রের কারণে সেটি আবার অচল হয়ে পড়ে। ওই চক্র বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের ফলে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। পরিবেশ বাঁচাতে তৎপর হয় পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা। তারা বোমা মেশিনের বিরুদ্ধে আইনীভাবে লড়তে আদালতে মামলা দায়ের করে। মূলত, ওই মামলার প্রেক্ষিতেই হাইকোর্ট সিলেটের সবকটি কোয়ারিতে বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করে। ফলশ্রæতিতে কর্মহীন হয়ে পড়ে কোম্পানীগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আগত শ্রমিকরা। এমনকি, কোয়ারি এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাবু গেড়ে থাকা শ্রমিকদের। নিরূপায় হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে প্রিয় কর্মস্থল ছেড়ে নিজ নিজ এলাকায় পাড়ি জমান তারা।

 

এদিকে, কর্মহীন শ্রমিকদের জীবন বাঁচাতে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন সিলেট ৪ আসনের সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ। তিনি শ্রমিকদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর কোয়ারি সচল রাখার নির্দেশ দেন। গত শুকনো মৌসুমে সনাতন পদ্ধতিতে যথারীতি কোয়ারি সচল ছিল। কিন্তুকোয়ারির পার ধ্বসে শ্রমিক নিহতের ঘটনায় ফের কোম্পানীগঞ্জ প্রশাসন ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি বন্ধ করে দেয়। পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন সরকার যে রাজস্ব পেতো তাও বন্ধ করে দেয়। সেই থেকে আজ প্রায় দীর্ঘ ৭/৮ মাস যাবৎ শ্রমিক ব্যবসায়ী সবাই বেকারত্ব জীবন পার করছেন। এমন পরিস্থতিতে কোম্পানীগঞ্জের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ অর্থাভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে অনেকটা মানবেতর দিনযাপন করছেন।

 

পাথর শ্রমিকরা জানান, কোয়ারি বন্ধ থাকায় আমরা বেকার হয়ে পড়েছি। পরিবার নিয়ে অর্ধাহারে, অনাহারে দিন যাপন করছি। সা¤প্রতিক করোনাভাইরাসের কারণে কোনোরূপ ছোটা কাজও করতে পারছি না। এই অবস্থায় আমাদের জীবন আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমাদের জীবনমান রক্ষায় শিগগরই পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়া হোক।

 

জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, শ্রমিকসংগঠনের একাধিক ব্যক্তির সাথে এ প্রতিবেদক আলাপকালে তারা জানান, সম্প্রতি ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারিতে সরকার বালু উত্তোলনের ইজারা ২কোটি টাকার উপরে নিলাম দিয়ে অনুমতি প্রদান করেছে। এতে ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারিতে বালু উত্তোলনের মধ্য দিয়ে কিছুটা শ্রমিকদের রুটি রুজির পথ সুগম হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা একেবারে নগণ্য। প্রকৃত পক্ষে এখানকার মানুষের কষ্ট লাঘব করতে হলে পাথর কোয়ারি খুলে দিতে হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের একটাই দাবি, অসহায় এই শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের অনুমতি দিন। প্রয়োজনে উত্তোলন ব্যবস্থায় সংস্কার আনুন। তবুও আমাদের কাজ করতে দিন।

 

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী শামীম আহমদ বলেন, দীর্ঘদিন ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারিতে অচলাবস্থা ছিল, বর্তমানে বালুমহাল ইজারায় শ্রমিকদের কিছুটা কাজের ব্যবস্থা হয়েছে। কিছুটা হলেও দুর্ভোগ কমেছে। কিন্তু পুরোপুরিভাবে দুর্ভোগ কমাতে হলে পাথর উত্তোলনের অনুমতি দিতে হবে। আশাকরি, বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নিবেন।

 

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল জলিল বলেন, দেশের বৃহত্তম পাথর কোয়ারিতে অচলাবস্থার কারণে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক-ব্যবসায়ী দিশেহারা। তিনি সরকারের কাছে জোর দাবি জানান, খাসকালেকশনের মাধ্যমে ভোলাগঞ্জ পাথরকোয়ারি সচল করে দেয়া হোক। এতে সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবে। ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের দুর্দশা লাঘব হবে।

 

বারকী শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি মজনু মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারিতে অচলাবস্থা থাকায় হাজার হাজার বারকী শ্রমিক বেকার জীবন অতিবাহিত করছেন। বর্তমানে বালু উত্তোলন সরাসরি কোয়ারি থেকে বড় বড় স্টিল নৌকায় না এনে বারকী শ্রমিক দ্বারা উত্তোলনের মতামত দিলে উপজেলার কয়েক হাজার শ্রমিকদের কর্মসংস্থান হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন
0Shares
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম