সিলেট ২৬শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১১ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
প্রকাশিত: ৭:৫৬ অপরাহ্ণ, জুন ১৯, ২০২০
অধ্যাপক মুনীরউদ্দিন আহমদ
আমার এই লেখাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মনযোগ দিয়ে পড়বেন। ডেক্সামেথাসন কোনো সাধারণ ওষুধ নয়। ডেক্সামেথাসন প্রেসক্রিপশন ড্রাগ। প্রেসক্রিপশন ড্রাগের মধ্যেও এটি একটি স্পেশাল ড্রাগ। জীবন রক্ষাকারী ওষুধ বলে রোগীর সংকটাপন্ন অবস্থায় জীবন বাঁচানোর জন্য শুধু এই ওষুধটি প্রয়োগ করা হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও রোগীকে এই ওষুধটি প্রয়োগ করার পূর্বে দশবার ভাবেন এবং প্রয়োগ করার পর নজরদারিতে রাখেন।
ডেক্সামেথাসন নিয়ে অ্যাডভেঞ্চারিজমের একদম কোনো সুযোগ নেই। অনুগ্রহ করে ডেক্সামেথাসনের অপব্যাবহার করবেন না। ডেক্সামেথাসনের আত্মচিকিৎসা কঠোরভাবে বর্জনীয়। হরমোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ওষুধ গ্রহণ করেছেন তো মরেছেন।
করোনা চিকিৎসার কোন স্টেজে রোগীর ওপর এই ওষুধটি প্রয়োগ করা যাবে, তা শুধু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা নির্ধারণ করবেন। ঘরে চিকিৎসা নেওয়া প্রাথমিক পর্যায়ের করোনা রোগীরা কোনোভাবেই ওষুধটি গ্রহণ করবেন না। রোগের প্রাথমিক পর্যায়ের রোগীরা ডেক্সামেথাসন গ্রহণ করলে অবস্থার ভয়ানক অবনতি ঘটবে। অক্সিজেন নেওয়া বা ভেন্টিলেটরে থাকা রোগীদের অবস্থা বুঝে শুধু ডেক্সামেথাসন দেওয়া যেতে পারে। তারপরও বলা হয়েছে – এসব রোগীদের ক্ষেত্রে ডেক্সামেথাসন প্রয়োগ মাত্র ৩০ শতাংশ মৃত্যুহার কমাতে পারে।
ডেক্সামেথাসনের মতো ওষুধ নিয়ে মিডিয়াতে বলতে বা লিখতে গেলে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আমাদের দেশে সব সাংবাদিকের সাংবাদিকতার মান প্রশংসনীয় নয়। ওষুধ ও রোগ সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান না থাকলে এসব সেনসেটিভ বিষয় নিয়ে রিপোর্টিং না করার জন্য আমি সাংবাদিকদের আহ্বান জানাব। একান্তই যদি রিপোর্টিং করতে হয়, তাহলে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ ফার্মাসিস্ট ও চিকিৎসকের সাহায্য নিন। কিছু মিডিয়া ওষুধ নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে যে স্টান্টবাজি করে আসছে এবং এখনো সমহারে করে চলেছে, তা সাধারণ মানুষ ও চিকিৎসকদের জন্য বিভ্রান্তি ও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অনুগ্রহ করে এসব বন্ধ করুন।
উন্নত দেশের মিডিয়াগুলো ভয়ংকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসম্পন্ন ওষুধ নিয়েও যদি দিনরাত প্রচারণা চালায়, তাতে আমরা আতঙ্কিত হই না। কারণ ওসব দেশে ওটিসি (যেসব ওষুধ কিনতে প্রেসক্রিপশন লাগে না) ড্রাগ ছাড়া কোনো প্রেসক্রিপশন ড্রাগই লাইসেন্সপ্রাপ্ত চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া হাজার চেষ্টা করেও কেউ কিনতে পারবে না। কিন্তু আমাদের দেশে কোনো ওষুধ কিনতেই প্রেসক্রিপশন লাগে না। বিচিত্র দেশ আমাদের! বিচিত্র মানুষ আমরা! ডেক্সামেথাসন নিয়ে তাই আমার এত ভয় ও আতঙ্ক।
কিছুদিন আগে আল-জাজিরা ও বিবিসি’র রিপোর্টে দেখলাম- কীভাবে বাংলাদেশের পতিতালয়গুলোতে ছোট ছোট শীর্ণকায় মেয়েরা মোটাসোটা, নাদুসনুদুস ও লাবণ্যময়ী হয়ে খদ্দের আকর্ষণ করার জন্য প্রতিদিন দেদারসে ডেক্সামেথাসন কিনে খাচ্ছে এবং পরবর্তীকালে ক্যান্সার ও কিডনি বিকল হয়ে মারা যাচ্ছে। সবচেয়ে কষ্টের ব্যাপার হলো – এই হতভাগ্য মেয়েগুলো জানে ডেক্সামেথাসনের কারণে তারা একসময় মারা যাবে। তারপরও জীবিকা ও বেঁচে থাকার জন্য তাদের এই বিষ খেতে বাধ্য করা হচ্ছে।
আরও বলি- পোল্ট্রি ও গবাদি পশু মোটাতাজা করার জন্যও ঢালাওভাবে ক্ষতিকর ডেক্সামেথাসন হরমোন ও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। সেই পোল্ট্রি ও নাদুসনুদুস গবাদিপশু খেয়ে প্রতিনিয়তই আমরা নানাভাবে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এই বিষয়ের ওপর আমার অনেক লেখা হয়ত আপনারা পড়েছেন পত্রপত্রিকায়।
এরপরও ডেক্সামেথাসন নিয়ে অ্যাডভেঞ্চারিজমে যাবেন? ভাবুন, একবার নয়, শতসহস্র বার।
লেখক: বিভাগীয় প্রধান, ফার্মেসি বিভাগ, ডেফোডিল ইন্টারন্যাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা।
সৌজন্যে : ঢাকাটাইমস।
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুনপ্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ তাজুল ইসলাম,
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : নাঈমুর রহমান নাঈম
উপদেষ্টা : উস্তার আলী
সম্পাদক কর্তৃক বার্তা অফসেট প্রেস, লিয়াকত ভবন, জল্লারপাড় রোড, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও প্রধান কার্যালয় : সামসুদ্দিন মার্কেট,(২য় তলা) পুরাতন পুলের মুখ ভার্থখলা,দক্ষিণ সুরমা সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ফোন : ০২৯৯৬৬৩২৩০১
মোবাইল : ০১৭১১-৩৯৯৬৬৬, ০১৭৩৩-৫৭৫৯২০ (সম্পাদক ও প্রকাশক)
ই-মেইল : sonalysylhet2016@gmail.com
Web : www.sonalysylhet.net
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি