সোনালী ডেস্ক🖊
সূত্র বলছে, ওই এমপি-মন্ত্রীদের অনুসন্ধানের বিষয়ে তিনজন পরিচালকের নেতৃত্বে পৃথক তিনটি টিম গঠন করা হয়। বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পাওয়া গেছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধেও। এর মধ্যে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মুনাজ আহমেদ নুর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ ও তার পিএস ডা. রাসেলের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানেরও বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে তার কাঁটাবনে ৩ হাজার বর্গফুটের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় কয়েক কোটি টাকার ডুপ্লেক্স বাড়ি এবং নামে-বেনামে আরও অনেক সম্পদ পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া পিরোজপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দীনের বিরুদ্ধেও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগ নেওয়ার সময় জাল-জালিয়াতির অভিযোগের তথ্য পাওয়া গেছে।
দুদক জানায়, লন্ডন, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও তুরস্কে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের অভিযোগে এনএসআইয়ের সাবেক ডিজি টি এম জোবায়েরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত ২০ আগস্ট ঢাকা ওয়াসার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের তথ্য চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিতে ইমিগ্রেশনে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
গতকাল তিনজনের দুর্নীতির অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। এর মধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার, নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ ও আত্মীয়স্বজনের নামে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম-৩ আসনের সাবেক এমপি মাহফুজুর রহমান মিতা এবং কুমিল্লা-৮ আসনের সাবেক এমপি নাছিমুল আলম চৌধুরী ওরফে নজরুলের বিরুদ্ধে। এমপি হওয়ার পর তাদের প্রায় ২০০ শতাংশ সম্পদ বেড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম-৩ আসনের সাবেক এমপি মাহফুজুর রহমান মিতা ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে তিনবার এমপি ছিলেন। ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামায় তার বার্ষিক আয় ছিল ৪৭ লাখ ৫ হাজার ৮০৫ টাকা। গত ১০ বছরে তার আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৪ লাখ ৬৭ হাজার ৮২৪ টাকা, যা ২০১৪ সালের বার্ষিক আয়ের তুলনায় ১০১ দশমিক ২ শতাংশ বেশি এবং অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ১৯৯ দশমিক ২৩ শতাংশের বেশি। স্ত্রী মাহমুদা মাহফুজের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ১৯০ শতাংশের বেশি। আর দুদকের অনুসন্ধানে তাদের নামে ঢাকার অদূরে পূর্বাচলে প্লট, রাজধানীর মতিঝিলে ৫ কাঠা জমির ওপর নির্মিত বিল্ডিং, গুলশানে ফ্ল্যাট, উত্তরার দিয়াবাড়িতে ৫ কাঠা জমির প্লট, হারামিয়া সন্দ্বীপে জমি, বাড়ি এবং মাহফুজুর রহমান মানি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছেন বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া কুমিল্লা-৭ আসনের সাবেক এমপি নাছিমুল আলম চৌধুরী ওরফে নজরুলের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। দুদকের তথ্যানুসন্ধানে তার নিজ নামে বিজে জিও টেক্সটাইল লিমিটেড নামে একটি কোম্পানিতে ১ কোটি ৫৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ, ঢাকার বনানী ডিওএইচএস ও নিকুঞ্জে ২টি ফ্ল্যাট, কুমিল্লার বরুড়া বাজারে ১৭টি দোকান, কুমিল্লা সদরে ঠাকুরবাড়ি ও ঝাউতলায় ২টি বহুতল বাড়ি এবং নামে-বেনামে প্রায় ৪৫০ শতাংশ জমি থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
দুদক জানায়, যশোর পৌরসভার সাবেক মেয়র জহুরুল ইসলাম চাকলাদার ওরফে রেন্টু চাকলাদার ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। তিনি ২০১৬ সালে যশোর পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগে নিজের বা পৈতৃকভাবে উল্লেখ করার মতো সম্পদ ছিল না। কিন্তু মেয়র হওয়ার পর তিনি অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। ২০১৮ সালে একই সময়ে শহরে ৭২টি রাস্তাঘাট নির্মাণ এবং শহরে বাতি স্থাপনে ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। তিনি শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম করে প্রায় ৪০ একর জমি আত্মসাৎ করেছেন। যশোর শহরের আরাবপুরে প্রায় ১০০ বিঘা জমির ওপর বিশাল বাগানবাড়ি, যশোর শহরের রূপদিয়া বাজারে ২০ বিঘা জমির ওপর একটি ফিড মিল, শহরের কাজিপাড়ায় সুদৃশ্য অট্টালিকা নির্মাণ করেছেন। তিনি যশোরের বাঘারপাড়ার একাধিক স্কুল-কলেজের সভাপতি হয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।
দুদকের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে জানা যায়, রেন্টু ক্ষমতার অপব্যবহার, নানাবিধ অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ ও আত্মীয়-স্বজনের নামে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। তার অবৈধভাবে অর্জিত জ্ঞাত-আয় বহির্ভূত সম্পদ থাকার প্রাথমিকভাবে তথ্য-প্রমাণ পাওয়ায় প্রকাশ্য অনুসন্ধানের জন্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।